সুরা আল-ক্বদর”র সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
শানে নুযুল:
ইমাম ইবনু জারীর ত্বাবারী বর্ণনা করেন:
عن مجاهد قال: كان في بني إسرائيل رجل يقوم الليل حتى يصبح ثم يجاهد العدوّ بالنهار حتى يُمْسِيَ ففعل ذلك ألف شهر فأنزل الله هذه الآية ( لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ ) قيام تلك الليلة خير من عمل ذلك الرجل
-“ইমাম মুজাহিদ বলেন: বনি ইসরাঈলের জনৈক ইবাদতকারী ব্যক্তি সমস্ত রাত্রি ইবাদতের মশগুল থাকত ও সকাল হতেই জিহাদের জন্যে বের হয়ে যেত এবং সারাদিন জিহাদে লিপ্ত থাকত। সে এক হাজার মাস এভাবে কাটিয়ে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ্ তা‘আলা সুরা ক্বদর নাযিল করে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন।” ২৪
➥২৪ - ইমাম তাবারী, জামি‘উল বায়ান ফী তা’ভিলিল্ কুরআন, ২৪/৫৩৩
১নং আয়াত:
* সুরার শুরুতে তাকিদসূচক শব্দ ব্যবহারের কারণ: إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ এর إِنَّا শব্দটি দৃঢ়তাসূচক অব্যয়। যা কোন বক্তব্যকে সন্দেহমুক্ত ও দৃঢ়তাজ্ঞাপক অর্থ প্রকাশের জন্য ব্যবহার হয়। আল্লাহর বাণী সবই সন্দেহমুক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। এর পরেও অব্যয়টি অত্যধিক দৃঢ়তা ও বান্দাহর মনযোগ আকর্ষণের জন্য বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
* কুরআন নাযিলের ক্ষেত্রে অতীতকালীন শব্দ ব্যবহারের কারণ: أَنْزَلْنَا শব্দটি انزال মাসদার থেকে باب افعال এর অতীতকালীন ক্রিয়া। “অতীতকালিন শব্দরূপ ব্যবহারের দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর অবিনশ্বর ক্ষমতায় পূর্বেই নির্ধারণ করে রেখেছেন যে, কুরআন কারিম এ লাইলাতুল ক্বদরে নাযিল করবেন।” ২৫
➥২৫ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান, সুরা ক্বদর, পারা- ৩০
* আল্লাহর শানে বহুবচনের শব্দরূপ ব্যবহারের কারণ: বহুবচনের আলামত نَا টি এখানে মহান রবের মর্যাদা জ্ঞাপক অর্থ প্রকাশ করে। অথবা, আল্লামা হাক্কী বলেন:
النون للعظمة او للدلالة على الذات مع الصفات والاسماء
-“বহুবচনের ‘নূন’টি সম্মানের জন্য ব্যবহার হয়েছে। কিংবা তা আল্লাহর সিফাত ও নামসমূহ-সহ তাঁর যাত তথা সত্ত্বার প্রতি নির্দেশ করে।” ২৬
➥২৬ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান, সুরা ক্বদর, পারা- ৩০
* কুরআনে নামের পরিবর্তে সর্বনাম ব্যবহারের কারণ: هُ সর্বনাম দ্বারা পবিত্র কুরআন কারিমকে বুঝানো হয়েছে। সরাসরি নাম ব্যবহার না করে সর্বনাম ব্যবহার করা হয়েছে এ জন্য যে, সকলের ধ্যানে কুরআন কারিম এতই প্রসিদ্ধ ও গ্রহণীয় যে, আলাদা করে এর নাম প্রকাশের প্রয়োজন পড়ে না।
* কুরআন কি একসাথে সম্পূর্ণটা নাযিল হয়েছে: أَنْزَلْنَا শব্দটি انزال মাসদার থেকে باب افعال এর ক্রিয়া। এর অর্থ হলো- ‘আমি (আল্লাহ্) সম্পূর্ণ কুরআন একসাথে নাযিল করেছি।’ অথচ আমরা জানি যে, কুরআন দীর্ঘ ২৩ বছরে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে একটু একটু করে নাযিল হয়েছে। তাহলে এখানে সম্পূর্ণটা একসাথে নাযিল করার কথা বলা হয়েছে কেন? এ ব্যাপারে মুফাসসিরগণ বলেন:
وجوابه أن المراد أن جبرآئيل نزل به جملة واحده فى ليلة القدر من اللوح المحفوظ الى بيت العزة فى السماء الدنيا واملاه على السفرة اى الملائكة الكاتبين فى تلك السماء ثم كان ينزل على النبى عليه السلام منجما على حسب المصالح وكان ابتدآء تنزيله ايضا فى تلك الليلة
-“এর জবাব হলো- এখানে একসাথে সম্পূর্ণ কুরআন নাযিল হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ‘হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম ক্বদরের রাত্রিতে লাওহে মাহফুয থেকে দুনিয়ার আসমানের (প্রথম আকাশে) বাইতুল ইজ্জতে সম্পূর্ণ কুরআন একসাথে নিয়ে অবতরণ করেন। ..... অতঃপর অবস্থার আলোকে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর একটু একটু করে তা নাযিল হয়। আর ওই নাযিল হওয়ার শুরুটাও হয়েছে এ লাইলাতুল ক্বদরে।” ২৭
➥২৭ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান, সুরা ক্বদর, পারা- ৩০
* কুরআন নাযিল হওয়ার সময় ফেরেশতাগণের মূর্ছা যাওয়া: তাফসিরে রূহুল বায়ানে এসেছে- ‘লাওহে মাহফুয থেকে (প্রথম আসমানের) বাইতুল ইজ্জতে কুরআন নাযিল হওয়ার রাত্রিতে ফেরেশতাগণ বেহোঁশ হয়ে গিয়েছিলেন।’ এর কারণ হলো- ‘তাঁদের নিকট হুযুর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন কিয়ামতের আলামত সমূহের একটি (অর্থাৎ নবীজি শেষ নবী এবং তিনি না আসা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না) আর কুরআন তাঁর উপরই নাযিল হবে। যা কিয়ামত সংঘটিত হওয়াকে নির্দেশ করে। অতএব, এ কিয়ামতের ভয়, আল্লাহর কালামের প্রতি সম্মান এবং তাঁর প্রতিশ্রæতি ও প্রতিবিধানের কারণে তাঁরা বেহোঁশ হয়ে গিয়েছিল।’ কিছু হাদিসে তা-ও এসেছে যে, ‘আল্লাহ্ যখন রহমতের কথা বলেন, তখন অনারবি ভাষায়- তথা সুরয়ানি বা ইবরানি ভাষায় বলেন। আর যখন আযাবের কথা বলেন, তখন আরবি ভাষায় বলেন। অতএব, যখন ফেরেশতারা মুহাম্মদি আরবিতে (আল্লাহর কালাম) শুনতে পেয়েছে, তখন তাঁরা ধারণা করেছে যে, তা শাস্তির বিধান। কাজেই তাঁরা (ভয়ে) মূর্ছা গিয়েছে।’ ২৮
➥২৮ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান, সুরা ক্বদর, পারা- ৩০
* কুরআন দিনে না হয়ে রাতে নাযিল হওয়ার কারণ: কুরআন কারিম দিনে নাযিল না হয়ে রাত্রিতে নাযিল হওয়ার কারণ সম্পর্কে শায়খ আবু তালিব মাক্কী কুদ্দিসা সিররুহু’র ‘কূতুল কুলূব’ কিতাবে রয়েছে:
لأن اكثر الكرامات ونزول النفحات والاسرآء الى السموات يكون بالليل والليل من الجنة لأنها محل الاستراحة والنهار من النار لأن فيه المعاش والتعب والنهار حظ اللباس والفراق والليل حظ الفراش والوصال وعبادة الليل افضل من عبادة النهار
-“রাতে নাযিল হওয়ার কারণ হলো- আসমানসমূহে অধিকাংশ বুযর্গি এবং সূক্ষ্ম ও ভেদতত্ত্ব সমূহ অবতরণ হয় রাতে। আর রাত্রি জান্নাত থেকে। কেননা, তা প্রশান্তিদায়ক সময়। আর দিন জাহান্নাম থেকে। কেননা, এতে রয়েছে জীবিকা অর্জনের পরিশ্রম ও ক্লান্তি। দিন হলো- পোষাক ও বিচ্ছেদের অংশ। আর রাত হলো- বিছানা ও মিলনের অংশ। তাই দিনের ইবাদতের চেয়ে রাতের ইবাদাত উত্তম।”২৯
➥২৯ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান, সুরা ক্বদর, পারা- ৩০
* ক্বদর শব্দের অর্থ ও নামকরণের কারণ পূর্বে আলোকপাত করা হয়েছে।
* সুতরাং পূর্ণ আয়াত শরিফের অর্থ হবে নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ্ তা‘আলার নামসমূহ ও গুণাবলিসহ তাঁর যাত এ মহিমান্বিত গ্রন্থ আল-কুরআনকে মহিমান্বিত নবীর উপর মহিমান্বিত এক রাত্রিতে নাযিল করার সিদ্ধান্ত পূর্বেই নিয়েছেন এবং তা একই সাথে সম্পূর্ণভাবে প্রথম আসমানের বাইতুল ইজ্জতে জিবরাইল আমিনের মাধ্যমে নাযিল করতঃ আবার এ পৃথিবীতে নাযিল করা শুরুর দ্বারা তা বাস্তবায়ন করেছেন।
২নং আয়াত:
* আপনি কি জানেন লাইলাতুল ক্বদর কী: আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন- ‘(হে হাবিব!) আপনি কি লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে জানেন?’ এখানে وما ادرك এবং ما ليلة القدر এর মধ্যে দুইবার প্রশ্নবোধক শব্দ ব্যবহার করে বিষয়টির প্রতি সকলের মনযোগ আকর্ষণ ও গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। এ সুরা নাযিলের পূর্বে ক্বদর সম্পর্কে রাসুল পাকের ‘অজ্ঞতা/না-জানা’কে বুঝানো হয় নি। কেননা, কুরআনের সুরা নিসাতে আল্লাহ্ বলেন:
وَأَنْزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ
-“আর আল্লাহ্ আপনার প্রতি কিতাব ও প্রজ্ঞা নাযিল করেছেন এবং আপনার অজানা সকল বিষয়ের জ্ঞান আপনাকে জানিয়ে দিয়েছেন।” ৩০
➥৩০ - সুরা নিসা: ১১৩
সুরা আর-রহমানে আল্লাহ্ বলেন:
الرَّحْمَنُ (১) عَلَّمَ الْقُرْآنَ (২) خَلَقَ الْإِنْسَانَ (৩) عَلَّمَهُ الْبَيَانَ (৪)
-“দয়াময় (আল্লাহ্)। (যিনি নবীজিকে) কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। (এরপর তিনি) মানব সৃষ্টি করেছেন। তাকে বর্ণনা শিক্ষা দিয়েছেন।” ৩১
➥৩১ - সুরা আর-রহমান: ১-৪
উপর্যুক্ত প্রথম আয়াতের عَلَّمَ শব্দটি অতীতকালীন অর্থজ্ঞাপক। আবার দ্বিতীয় আয়াত সমূহে বলা হয়েছে, ‘মানব সৃষ্টির পূর্বেই নবীজিকে আল্লাহ্ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন’। কাজেই এ সুরা পৃথিবীতে নাযিল হওয়ার পূর্ব থেকেই রাসুল পাক এ সকল বিষয়ে জ্ঞান রাখতেন।
* ক্বদর রজনীতে ফেরেশতাগণের নিকট দায়িত্ব বন্টন: শা‘বানের অর্ধ রাত্রি তথা লাইলাতুল বারাআতে আল্লাহ্ পাক মানুষের ভাগ্যলিপি নির্ধারণ করেন এবং লাইলাতুল ক্বদরে তা বন্টন করে দেন। কিংবা তা বন্টনের দায়িত্ব ফেরেশতাগণের নিকট অর্পন করেন। যেমন, হযরত ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত:
عن ابن عباس رضى الله عنهما ان الله قدر فيها كل ما يكون فى تلك السنة من مطر ورزق واحياء واماتة وغيرها الى مثل هذه الليلة من السنة الآيتة فيسلمه الى مدبرات الامور من الملائكة فيدفع نسخة الارزاق والنباتات والامطار الى ميكائيل ونسخة الحروب والرياح والزلازل والصواعق والخسف الى جبرآئيل ونسخة الاعمال الى اسرافيل ونسخة المصائب الى ملك الموت
-“আগামী লাইলাতুল ক্বদর পর্যন্ত এ বছরের বৃষ্টি, রিযক, জীবন, মৃত্যু প্রভৃতি আল্লাহ্ তা‘আলা এ রাত্রিতে নির্দিষ্ট করেন বা বন্টন করেন। অতঃপর এর কার্যকারিতার দায়িত্ব অর্পন করেন ফেরেশতাগণের উপর। রিযক, উদ্ভিদ ও বৃষ্টির তালিকা হযরত মিকাইলের উপর; যুদ্ধ, বাতাস, ভুমিকম্প, দুর্যোগ, খরা’র তালিকা হযরত জিবরাইলের উপর; আমলনামার তালিকা হযরত ইসরাফিলের উপর এবং বালা-মুসিবতের তালিকা হযরত আযরাইল (আলাইহিমুস সালাম)’র উপর ন্যস্ত করেন।” ৩২
➥৩২ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান, সুরা ক্বদর, পারা- ৩০
* লাইলাতুল ক্বদরে রবের যাতের তাজাল্লি: আল্লামা ইসমাইল হাক্কী বলেন:
وقد وقع تجلى الافعال لسيد الانبياء عليه السلام فى رجب ليلة الجمعة الاولى بين العشاءين فلذا استحب صلاة الرغائب وقتئد وتجلى الصفات فى نصف شعبان فلذا استحب صلاة البرآءة بعد العشاء قبل الوتر وتجلى الذات فى ليلة القدر ولذلك استحب صلاة القدر
-“সায়্যিদুল্ আম্বিয়া হুযুর আলাইহিস সালামের উপর রজব মাসের প্রথম জুমু‘আর রাতের মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে রবের আফ‘আল (কর্মসমূহ)’র তাজাল্লি পতিত হয়। এ-কারণে সে সময় ‘সালাতুর রাগাইব’ পড়া মুস্তাহাব। আর শা‘বানের মধ্য রাতে (শবে বারাআতে) সিফাত বা গুণাবলিসমূহের তাজাল্লি পতিত হয়েছে। তাই সে-দিন ইশার পরে বিতর নামাযের আগে বারাআতের নামায পড়া মুস্তাহাব। আর লাইলাতুল ক্বদরে (রবের) যাতের তাজাল্লি পতিত হয়েছে। এ-কারণে এই সময় ক্বদরের নামায পড়া মুস্তাহাব।” ৩৩
➥৩৩ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান, সুরা ক্বদর, পারা- ৩০
* সুতরাং এককথায়, এ আয়াতের অর্থ হবে- হে হাবিব! আপনি তো জানেনই এ রাতের মর্যাদা কত অধিক। কাজেই এর মাহাত্ম্যেও কথা আপনার উম্মতদিগকেও জানিয়ে দিন, তাঁরা যেন এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতঃ এ রাতের রবের ইবাদতে অতিবাহিত করে।
৩নং আয়াত:
এ রাতের ফযিলত ও শ্রেষ্ঠত্বের কারণ পূর্বে আলোকপাত করা হয়েছে। রুহুল বায়ানে এসেছে: “লাইলাতুল ক্বদরে রাত্রি জাগরণ করে ইবাদাত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করা হাজার মাস হতেও উত্তম। অর্থাৎ ক্বদরের দিনের রোযা ও রাতের বন্দেগি ক্বদরের সময় নয় এমন হাজার মাস থেকে উত্তম ও মর্যাদামন্ডিত। আর হাজার মাস বলতে ৮৩ বছর ৪ মাস বুঝায়।” ৩৪
➥৩৪ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান, সুরা ক্বদর, পারা- ৩০
৪নং আয়াত:
* উম্মতের মাগফিরাত কামনায় ফেরেশতা নাযিল: এ রাতে সকল আসমান থেকে পৃথিবীতে ফেরেশতাগণ দলে দলে অবতরণ করে থাকে। এমনকি তাঁদের আগমনে জমিনে জায়গার সংকীর্ণতা তৈরী হয়। তাঁদের প্রস্থানে সূর্যের আলোকরশ্মি ম্লান হয়ে যায়। তাঁরা সূর্যাস্তের পরে আগমন করেন এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত পৃথিবীতে বিরাজ করে। “কেউ কেউ বলেন: এ রাতে যে সকল ফেরেশতা আগমন করে, তাঁদের আবাসস্থল সিদরাতুল মুনতাহা। এদের সংখ্যা কত আল্লাহ্ ছাড়া কেউ জানেন না। আর জিবরাইল আমিনের স্থান হলো তাঁদের ঠিক মাঝখানে। এ সকল ফেরেশতা গীর্জাসমূহে, যে ঘরে মুর্তি থাকে, যে স্থানে কুকুর, ছবি ও নাপাকি থাকে এবং যে ঘরে মাদকদ্রব্য, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী, শুকর ভক্ষণকারী থাকে, সে-সকল স্থান বা ঘরে প্রবেশ করেন না।” ৩৫
➥৩৫ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান, সুরা ক্বদর, পারা- ৩০
* এ রাতে ‘রুহ নাযিল হয়’ কথাটির ব্যাখ্যা: ক্বদরের রাতে অন্যান্য ফেরেশতার সাথে ‘রুহ’ নাযিল হয়ে সকলে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য দয়া, ক্ষমা ও রিযক প্রার্থনা করে। ‘রুহ’ বলতে কী বুঝায়? এ নিয়ে কয়েকটি মতামত পাওয়া যায়। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো:
🌱 ইমাম কুরতুবী বলেন: ‘রুহ্ বলতে এখানে জিবরাইল আমিন আলাইহিস্ সালামকে বুঝানো হয়েছে।’৩৬
➥৩৬ - ইমাম কুরতুবী, আল-জামি‘উ লিআহকামিল কুরআন, ২২/৩৯৫
🌱 হযরত জিবরাইলের একটি লক্বব হচ্ছে ‘রুহুল আমিন’।
🌱 ‘রুহ্’ এমন একজন বিশাল ফেরেশতা আসমান ও জমিন যার সামনে একটি মাত্র লুকমার সমান। ৩৭
➥৩৭ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান, সুরা ক্বদর, পারা- ৩০
🌱 অথবা, ‘রুহ্’ এমন একটি ফেরেশতা, যার মাথা আরশের নিচে এবং পা’ সপ্তম জমিনের শেষে। তাঁর একহাজার মাথা রয়েছে এবং প্রত্যেকটি মাথা দুনিয়া থেকেও বড়। আবার প্রত্যেকটি মাথায় একহাজার করে চেহারা রয়েছে, প্রত্যেক চেহারায় একহাজার করে মুখ রয়েছে, প্রত্যেক মুখে একহাজার করে জিহবা রয়েছে। আর এ সকল জিহবা দ্বারা হাজার রকমের তাসবিহ, তাহমিদ ও তামজিদ বর্ণনা করতে থাকে। প্রত্যেকটি জিহবার আলাদা আলাদা ভাষা রয়েছে, যার একটি অপরটির সাথে মিলে যায় না। অতঃপর যখন সে তাসবিহ পাঠের জন্য তাঁর মুখ খুলে দেয় আসমানের ফেরেশতারা ভয় পেয়ে যায় এবং তাঁর মুখের নুরের কিরণে সিজদায় পতিত হয়। এভাবে সে সকাল-সন্ধ্যা রবের তাসবিহ পড়তে থাকে। আর এ বিশাল ফেরেশতা-ই ক্বদরের রজনীতে অবতরণ করেন এবং তাঁর সকল মুখের দ্বারা উম্মতে মুহাম্মদির সকল রোযাদার নর-নারীর জন্য ফজর পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। ৩৮
➥৩৮ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান, সুরা ক্বদর, পারা- ৩০
🌱 অথবা, ‘রুহ্’ বলতে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে বুঝানো হয়েছে। কেননা তাঁর একটি নাম হলো- ‘রুহুল্লাহ্’। ৩৯
➥৩৯ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান, সুরা ক্বদর, পারা- ৩০
🌱 হযরত মুহাম্মদ পারসা রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: ‘রুহ্’ হলেন- হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ৪০
➥৪০ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান, সুরা ক্বদর, পারা- ৩০
* ফেরেশতাগণের আল্লাহর অনুমতি কামনা: তাফসিরে রুহুল বায়ানে এসেছে- ‘এর রাতে ফেরেশতাগণ আল্লাহর অনুমতি কামনা করে এবং উম্মতে মুহাম্মদিকে দেখার জন্য উদগ্রীব থাকে। কেননা আল্লাহ্ এ উম্মতের গুনাহসমূহ তাঁদের নিকট গোপন রাখেন এবং নেকসমূহ প্রকাশ করেন।’ ৪১
➥৪১ - আল্লামা হাক্কী, রুহুল বায়ান, সুরা ক্বদর, পারা- ৩০
অতঃপর তাঁরা পৃথিবীতে আসে যাবতীয় রহমত ও বরকতের বার্তা নিয়ে।
৫নং আয়াত:
তাফসিরে কুরতুবিতে এসেছে- “ক্বদরের রজনীর সবটুকুন সময়েই শান্তি ও কল্যান রয়েছে, এতে কোন অকল্যান নেই। এমনকি তা ফজর পর্যন্ত। অর্থাৎ সূর্যোদয় পর্যন্ত। ইমাম দ্বাহহাক বলেন: এ রাতে শান্তি ছাড়া অন্যকিছু আল্লাহ্ নির্ধারণ করেন না।” ৪২
➥৪২ - ইমাম কুরতুবী, আল-জামি‘উ লিআহকামিল কুরআন, ২২/৩৯৭)।
_____________
লাইলাতুল ক্বদর : ফযিলত ও আমল
গ্রন্থনা ও সংকলন: মুফতি মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন আন-নাজিরী
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন