তারা উপলব্ধি করতে অক্ষম যে প্রিয়নবী (ﷺ)-এর সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)-কে গালমন্দ করে তারা বাস্তবে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কেই হেয় ও অপমান করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
❏ “শিফা” গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে যে,ইমাম মালেক ইবনে আনাস্ (رحمة الله) বলেছেন,
مَنْ شَتَمَ أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى الله عليه وسلم أبا بكرأَوْ عُمَرَ ، أَوْ عُثْمَانَ ، أَوْ مُعَاوِيَةَ ، أَوْ عَمْرَو بْنَ الْعَاصِ فَإِنْ قَالَ: كَانُوا عَلَى ضَلَالٍ وَكُفْرٍ قُتِلَ، وَإِنْ شَتَمَهُمْ بِغَيْرِ هَذَا مِنْ مُشَاتَمَةِ النَّاسِ نُكِّلَ نَكَالًا شَدِيدًا.
– যে ব্যক্তি হযরত মোয়াবিয়া (رضي الله عنه) (বেসাল: ৬০ হিজরী/৬৮০ খৃষ্টাব্দ, দামেশক) ও হযরত আমর ইবনে আস্ (رضي الله عنه) (বেসাল: ৪৩ হিজরী/৬৬৩ খৃষ্টাব্দ, মিসর)-এর কুৎসা রটনা করে এবং তাঁদেরকে গালমন্দ করে, তার প্রাপ্য হলো সেই সব বাক্যমালা যা সে তাঁদের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছে। যারা তাঁদের বিরুদ্ধে বলে ও লিখে এবং তাঁদেরকে সম্মান করে না, তাদেরকে কঠোরভাবে শাস্তি দেয়া আবশ্যক।
🔺[২২] কাযী আয়ায : আশ শিফা, ২:২৫৩।
আল্লাহ্ পাক আমাদের অন্তরগুলোকে তাঁর হাবীব (ﷺ)-এর সাহাবীবৃন্দ (رضي الله عنه)-এর প্রতি ভালোবাসা দ্বারা পরিপূর্ণ করুন, আমীন। মোনাফেক ও পাপিষ্ঠ লোকেরা নয়, বরং খোদা-ভীরু, নেককার মুসলমানবৃন্দ-ই ওই সকল গুরুজনকে ভালোবাসেন।
🔺[হযরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)’র আসহাব-এ-কেরাম তথা সাথীবৃন্দের (رضي الله عنه) মূল্য ও শ্রেষ্ঠত্ব যে সকল মুসলমান উপলব্ধি করেন এবং তাঁদেরকে ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন ও অনুসরণ করেন, তাঁরা আহলে সুন্নাত নামে অভিহিত। যারা সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه)-এর মধ্যে কয়েকজনকে ভালোবাসার দাবি করে এবং অন্যান্যদের প্রতি মহব্বত রাখে না, আর এরই ফলশ্রুতিতে তাঁদের অধিকাংশেরই কুৎসা রটনা করে এবং অনুসরণও করে না, তাদেরকে বলা হয় শিয়া। ইরান, ভারত ও ইরাক্বে অনেক শিয়া রয়েছে, কিন্তু তুরস্কে নেই। এদের মধ্যে কিছু কিছু শিয়াপন্থী তুরস্কের প্রকৃত ‘আলাউয়ী’ মুসলমানদেরকে ধোকা দেয়ার জন্যে নিজেদেরকে ‘আলাউয়ী’ নামে ডাকে, যার অর্থ ’হযরত ইমামে আলী (رضي الله عنه)’র প্রতি মহব্বতকারী মুসলমান।’ কাউকে ভালোবাসার জন্যে প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায় তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ এবং তিনি যাঁদের ভালোবাসেন, তাঁদেরকেও ভালোবাসা; যদি শিয়ারা হযরত আলী (رضي الله عنه)’কে ভালোবাসতো, তাহলে তারা তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করতো। তিনি তো রাসূলে খোদা (ﷺ)’র সকল সাহাবা (رضي الله عنه)-কেই ভালোবাসতেন; খলীফা উমর (رضي الله عنه)-এর উপদেষ্টা ছিলেন; খলীফা তাঁকে নিজের দুঃখকষ্টের কথা জানাতেন। তিনি তাঁর এবং মা ফাতেমা (رضي الله عنه)’র কন্যা উম্মে গুলসুমকে হযরত উমর ফারূক (رضي الله عنه)-এর সাথে বিয়ে দেন।
❏ একটি খুতবায় তিনি আমীরে মু’আবিয়া (رضي الله عنه) সম্পর্কে বলেন:
إخْوَانُنَا بَغَوْا عَلَيْنَا لَيْسُوا بِكُفَّارٍ وَلاَ فِساَقٍ فانَ لَهُمْ تَاوِيْلاً يَمْنَعُ عَنْهُمْ الْكُفْرُ وَالْفِسْق
“আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। কিন্তু তাঁরা কাফের বা পাপী নন। তাঁদের এজতেহাদ ওই পন্থায় হয়েছে”
🔺(ক/ মুসলিম: আস সহীহ, ১২:৪২৬ হাদীস নং ৪৬৫০; খ/ ইবনে মাজাহ: আস সুনান, ১২:১৭৩ হাদীস নং ৪১৩৩; গ/ আল খতিব: মিশকাতুল মাসাবীহ, ৩:১৫২, হাদীস নং ৫৩১৪; ঘ/ আহমদ: আল মুসনাদ, ১৬:৩৪, হাদীস নং ৭৪৯৩; ঙ/ বায়হাকী: শুয়াবুল ইমান, ২১:৪০৯, হাদীস নং ১০০৮৮; চ/ ইবনে হিব্বান : আস সহীহ, ২:২৭৮, হাদীস নং ৩৯৫)।
❏ হযরত তালহা (رضي الله عنه) যখন তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় শহীদ হন, তখন তিনি নিজেই হযরত তালহা (رحمة الله)’র মুখ হতে ধুলো পরিষ্কার করে দেন এবং তাঁর জানাযার নামাযে ইমামতি করেন।
❏ আল্লাহতায়া'লা ঘোষণা করেন:
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ
“ঈমানদাররা পরস্পরের ভাই” (আল কুরআন: আল-হুজুরাত, ৪৯:১০)।
❏ সূরা ফাত’হ-এর শেষ আয়াতে তিনি এরশাদ ফরমান –
رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ
অর্থ: সাহাবা-মণ্ডলী পরস্পরের প্রতি করুণা/মহব্বতশীল (আল কুরআন: আল-ফাতহ, ৪৮:২৯)।
মহানবী (ﷺ)’র এমন কী একজন সাহাবী (رضي الله عنه)’কেও ভালো না বাসা, কিংবা আরো মন্দকর্ম হিসেবে হুযূরের (ﷺ) প্রতি বৈরীভাবাপন্ন হওয়ার মানে হলো ক্বুরআনুল করীমেরই প্রতি অবিশ্বাস স্থাপন। সুন্নী উলামাবৃন্দ সঠিকভাবে সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه)-এর শ্রেষ্ঠত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন এবং (সেই মোতাবেক) মুসলমানদের প্রতি তাঁদেরকে ভালোবাসার জন্যে নির্দেশ দিয়েছিলেন; আর ফলশ্রুতিতে তাঁরা সকল মুসলমানকে বিপদ হতে রক্ষা করেন।
_____________
কিতাবঃ ঈমান ও ইসলাম
মূল: মওলানা খালেদ আল-বাগদাদী (رحمة الله)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন