বাতিল ফির্কার পরিচয়

 

আহলে সুন্নাতের নয়নমণি আমাদেরই গুরুজন হযরত ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহুল করীম) ও তাঁর পুত্রবৃন্দ এবং বংশধরদের প্রতি যারা ঘৃণা ও বৈরীভাব পোষণ করতো, তাদের বলা হতো খারেজী (খাওয়া’রিজ)। বর্তমানে তাদেরকে এয়াযীদী নামে ডাকা হয়। তাদের আক্বীদা-বিশ্বাস এতোই ভ্রান্ত যে দ্বীন-ইসলামের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।



ওহাবী সম্প্রদায় হযরতে সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه)-এর প্রতি মহব্বতের দাবিদার হলেও তারা তাঁদের পথ ও মতকে অনুসরণ করে না, বরঞ্চ অনুসরণ করে নিজেদের গোমরাহীর, যেটাকে তারা সাহাবা (رضي الله عنه)-বৃন্দের প্রতি আরোপ করে থাকে। তারা পছন্দ করে না আহলে সুন্নাতের হক্কানী উলামামণ্ডলীকে, সূফীবৃন্দকে এবং ‘আলাউয়ী’দেরকেও; আর তারা এঁদের সবারই কুৎসা রটনা করে থাকে। তারা ধারণা করে যে একমাত্র তারাই হলো মুসলমান। তাদের মতো নয় এমন মুসলমানদেরকে তারা ‘মুশরিক/মূর্তি পূজারী’ বিবেচনা করে এবং তাঁদের জান ও মাল হরণ করতে সম্মত হয়। ফলে তারা ‘এবা’হাতী’ গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। ক্বুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফ হতে তারা ভুল অর্থ বের করে এবং মনে করে যে ইসলাম ধর্ম বুঝি ওইসব অর্থ নিয়েই গঠিত। তারা আদিল্লাত আশ-শরীয়ত (শরঈ দলিলাদি) এবং বেশির ভাগ হাদীস-ই অস্বীকার করে। চার মাযহাবের বিশিষ্ট আলেম-উলামা বহু বইপত্র লিখে দলিলাদিসহ প্রমাণ করেছেন যে আহলে সুন্নাত হতে যারা বিচ্যুত হয়, তারা গোমরাহ/পথভ্রষ্ট এবং ইসলামের জন্যে ক্ষতিকর। 🔺[বি:দ্র: বিস্তারিত তথ্যের জন্যে পড়ুন ‘ওহাবীদের প্রতি নসীহত’, ‘অনন্ত আশীর্বাদ’, ‘ওহাবী মতবাদ খণ্ডনে ঐশী অবদান’, (আরবীতে) ‘আত-তাওয়াসসুলু বিন্ নবী ওয়া জাহালাত আল-ওয়াহহা’বিয়্যীন’ ও ‘সাবি’ল আন্ নাজাত’ এবং (ফার্সীতে) ‘সাইফ আল-আবরার’ বইগুলো। এসব বই এবং আহলে বেদআত গোষ্ঠীর খণ্ডনে মূল্যবান গ্রন্থাবলী ইস্তাম্বুলে অবস্থিত হাক্বীক্বাত কিতাবাভী কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে।  (ইমাম মুহাম্মদ আমিন ইবনে আবেদীন যিনি দামেশকে ১২৫২ হিজরী/১৮৩৬ খৃষ্টাব্দ সালে বেসালপ্রাপ্ত হন, তাঁর রচিত) আরবী ‘রাদ্দুল মোহতার’ (৩য় খণ্ড, ‘বাগী’ অধ্যায়) ও তুর্কী ’নি’মাত-এ-ইসলাম’ (’নিকাহ’ অধ্যায়) শীর্ষক দুটো পুস্তকেই স্পষ্টভাবে লেখা হয়েছে যে ওহাবীরা হচ্ছে ‘এবা’হতী। আইয়ূব সাবরী পাশা (ইন্তেক্বাল: ১৩০৮ হিজরী/১৮৯০ খৃষ্টাব্দ) যিনি সুলতান আবদুল হামীদ খাঁন ২য়’র শাসনামলে নৌবাহিনীর রিয়ার-এডমিরাল পদে কর্মরত ছিলেন, তিনি তাঁর লিখিত ‘মিরআত আল-হারামাইন’ ও ‘তা’রীখে ওয়াহহা’বিয়্যীন’ শীর্ষক দুটি গ্রন্থে এবং আহমদ জওদাত পাশা নিজের ‘উসমানীয়া তুর্কী ইতিহাস’ শীর্ষক পুস্তকের ৭ম খণ্ডে ওহাবীদের সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা লিপিবদ্ধ করেন। ইমাম ইঊসুফ নাবহানী  (رحمة الله)-ও তাঁর আরবী ‘শওয়াহিদুল হক্ব’ (৩য় সংস্করণ, কায়রো, ১৩৮৫ হিজরী/১৯৬৫ খৃষ্টাব্দ) শীর্ষক কিতাবে ওহাবী গোষ্ঠী ও ইবনে তাইমিয়ার সামগ্রিক খণ্ডন করেন। তাঁর বইয়ের পঞ্চাশটি পৃষ্ঠা আরবী ‘উলামা’ আল-মুসলিমীন ওয়া ওয়াহহা’বিয়্যূন’ শিরোনামের পুস্তকে পুনর্মুদ্রিত হয়েছে (ইস্তাম্বুল, ১৯৭২)।]



আইয়ূব সাবরী পাশা (রাহিমাহ-আল্লাহু তাআলা) বলেন, “আরব উপদ্বীপে ১২০৫ হিজরী/১৭৯১ খৃষ্টাব্দ সালে ওহাবী মতবাদের আবির্ভাব ঘটে এক রক্তাক্ত ও নির্যাতনমূলক বিদ্রোহের মাধ্যমে।” মিসরের আবদুহু ছিলো সেসব লোকের একজন, যে তার বইপত্র দ্বারা গোটা বিশ্বে লা-মাযহাবী/সালাফী মতবাদের প্রচার-প্রসার করার অপপ্রয়াস পায়। (তুরস্কে) ইউনিয়ন ও প্রগ্রেস পার্টির শাসনামলে আবদুহু’র পুস্তকগুলো তুর্কী ভাষায় অনূদিত হয় এবং সেগুলো তরুণ প্রজন্মের সামনে “ইসলামের মহান আলেম, (উদ্ভাবনী) চিন্তাধারায় আলোকিত ব্যক্তিত্ব, বিখ্যাত সংস্কারক আবদুহুর কীর্তি” হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অথচ আবদুহু প্রকাশ্যে লিখেছিলো সে জামালউদ্দীন আফগানী (১৩১৪ হিজরী/১৮৯৭ খৃষ্টাব্দ)’কে শ্রদ্ধা করতো; আর এই জামালউদ্দীন আফগানী ছিলো একজন ফ্রীমাসন (Freem❏ son/যিনদিক্ব) ও কায়রোর মাসনিয়্যা গোষ্ঠীর প্রধান। ইসলামের শত্রুরা যারা আহলে সুন্নাতকে অতর্কিত হামলায় বিনাশ সাধন করতে এবং দ্বীন-ইসলামকে চাটুকারিতাপূর্ণ মিথ্যে কথা দ্বারা নির্মূল করতে অপতৎপর ছিলো, তারা ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সেজে এই ফিতনাকে ভেতর থেকে উস্কানি দেয়। আবদুহুর গুণকীর্তন করে তাকে আকাশে তোলা হয়। আহলে সুন্নাতের মহান উলামাদেরকে এবং আ’ইম্মায়ে মাযা’হিব (চার মাযহাবের চারজন ইমাম)’কে মূর্খ বলে ঘোষণা করা হয়। তাঁদের নামের উল্লেখ বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের পূর্বসূরীমণ্ডলীর খাঁটি ও মহৎ উত্তরসূরীবৃন্দ যাঁরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও দ্বীন-ইসলামের খাতিরে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, যাঁরা ছিলেন সম্মানিত শহীদানের আওলাদ, তাঁরা এসব কোটি কোটি পাউন্ড-স্টার্লিং ব্যয়িত অপপ্রচারের মুখে দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না। ওই সকল ভুয়া ‘ইসলামী নায়ক’দের কথা শুনতে বা তাদেরকে স্বীকার করতে তাঁরা রাজি ছিলেন না। শহীদানের সন্তানদেরকে এই জঘন্য আক্রমণ হতে আল্লাহতায়া'লা রক্ষা করেছেন। আজকে মওদূদী (*ভারত উপমহাদেশে জামাআতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা; ১৩৯৯ হিজরী/১৯৭৯ খৃষ্টাব্দ সালে সে মারা যায়), সাইয়্যেদ ক্বুতুব (*মিসরে ১৩৮৬ হিজরী/১৯৬৬ খৃষ্টাব্দ সালে তাকে প্রাণদণ্ড দেয়া হয়) ও হামিদউল্লাহ’র মতো লা-মাযহাবী/সালাফীপন্থী লোকদের বইপত্র ভাষান্তর করে তরুণ প্রজন্মের সামনে পেশ করা হচ্ছে। এগুলোতে নিহিত রয়েছে গোমরাহীপূর্ণ ধ্যানধারণা যা আহলে সুন্নাতের উলামাবৃন্দের ব্যক্ত মতাদর্শের খেলাফ; আর এগুলো অত্যধিক স্তুতির মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করা হচ্ছে। তাই আমাদেরকে সর্বদা সতর্ক হতে হবে। আল্লাহতায়া'লা তাঁর প্রিয়তম হাবীব (ﷺ)’র অসীলায় মুসলমানদেরকে অনবধানতা থেকে জাগ্রত করুন! দুশমনদের মিথ্যে ও কুৎসার ধোকায় পড়া হতে তিনি তাদেরকে রক্ষা করুন, আমীন! স্রেফ এবাদত-বন্দেগী পালনের মাধ্যমে আমরা যেনো নিজেদের প্রতারিত না করি! আল্লাহতায়া'লার ‘আল-আদত আল-ইলাহিয়্যা’তথা ঐশী বিধানকে আঁকড়ে না ধরে, অর্থাৎ কোনো মাধ্যম/অসীলা গ্রহণ না করে প্রার্থনা করার মানে হলো মহান প্রভুর কাছ থেকে অলৌকিকত্ব আশা করা। একজন মুসলমানের উচিত কাজ ও প্রার্থনা দুটোই এক সাথে চালিয়ে যাওয়া। প্রথমে মাধ্যমকে আমাদের ধরতে হবে, তারপর প্রার্থনা করতে হবে। অবিশ্বাস/কুফর হতে রক্ষা পেতে হলে প্রথম মাধ্যমটি হলো ইসলাম শিক্ষা করা এবং তা শিক্ষা দেয়া। বস্তুতঃ আহলে সুন্নাতের আক্বীদা-বিশ্বাস, আদেশ ও নিষেধ সম্পর্কে জানা প্রত্যেক নর ও নারী তথা সবার জন্যে ফরয/বাধ্যতামূলক এবং প্রাথমিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।

_____________

কিতাবঃ ঈমান ও ইসলাম

মূল: মওলানা খালেদ আল-বাগদাদী  (رحمة الله)  

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন