রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর ওয়াস্তে তাঁর সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) নিজেদের জীবন ও মালামাল উৎসর্গ করেন এবং তাঁকে সাহায্য করেন। তাঁদের যে কারো নাম উল্লেখ করার সময় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাসহ তা করা আমাদের জন্যে অবশ্যকর্তব্য (ওয়াজিব)। তাঁদের মাহাত্ম্যের পরিপন্থী কোনো অশোভনীয় উক্তি করা আমাদের জন্যে অনুমতিপ্রাপ্ত নয়। অশ্রদ্ধাসহ তাঁদের নাম উল্লেখ করা গোমরাহী (পথভ্রষ্টতা) ও বিচ্যুতি।
যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে ভালোবাসেন, তাঁর জন্যে সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)-কে ভালোবাসাও কর্তব্য।
❏ একটি হাদীসে নূরনবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান —
فَمَنْ أَحَبَّهُمْ فَبِحُبِّي أَحَبَّهُمْ ، وَمَنْ أَبْغَضَهُمْ فَبِبُغْضِي أَبْغَضَهُمْ ، وَمَنْ آذَاهُمْ فَقَدْ آذَانِي ، وَمَنْ آذَانِي فَقَدْ آذَى اللَّهَ ، وَمَنْ آذَى اللَّهَ أَوْشَكَ أَنْ يَأْخُذَهُ.
– যে ব্যক্তি আমার সাহাবীদেরকে ভালোবাসে, সে আমাকে ভালোবাসার কারণেই ভালোবাসে। যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালোবাসে না, সে আমাকেও ভালোবাসে না। যে ব্যক্তি তাদেরকে আঘাত দেয়, সে প্রকৃতপক্ষে আমাকেই আঘাত দেয়। আর যে ব্যক্তি আমাকে আঘাত দেয়, সে আল্লাহ তায়া'লাকেই আঘাত দেয়। আল্লাহ তায়া'লাকে যে ব্যক্তি আঘাত দেয়, সে অবশ্যই শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।”
🔺[২০]
(ক) আহমদ : আল মুসনাদ, ৪:৮৭ হাদীস নং ১৬৮৪৯।
(খ) তিরমিযী : আস সুনান, ৬:১৭৯ হাদীস নং ৩৮৬২।
(গ) বাগাবী : শরহুস সুন্নাহ, ১৪:৭০ হাদীস নং ৩৮৬০।
(ঘ) বায়হাকী : শুয়াবুল ইমান, ২:১৯১ হাদীস নং ৬৪৯।
❏ অপর এক হাদীস শরীফে তিনি এরশাদ ফরমান —
اذَا اَرَادَ اللهُ بِرجُلٍ مِنْ أُمَتِيْ خَيْراً اُلْقَيَ حُب اَصْحَابِيْ فِيْ قَلْبِهِ
– যখন আল্লাহতায়া'লা আমার উম্মতের মধ্যে কাউকে কৃপা করতে চান, তখন তিনি তার অন্তরে আমার সাহাবীদের প্রতি ভালোবাসা প্রোথিত করেন। আর ফলস্বরূপ সেই ব্যক্তিও তাদেরকে অত্যন্ত ভালোবাসে”।
এ কারণেই এটা ধারণা করা উচিৎ নয় যে নবী করীম (ﷺ)-এর সাহাবী (رضي الله عنه)-বৃন্দ খলিফা হওয়ার জন্যে কিংবা নিজেদের বদ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যে অথবা নিজেদের ইন্দ্রিয় কামনাকে পূর্ণ করার জন্যে পরস্পর পরস্পরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। এ ধরনের ধারণার বশবর্তী হয়ে তাঁদের সমালোচনা করা চরম মোনাফেকী (কপটতা) যা কোনো ব্যক্তিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। কেননা, রাসূলে আকরাম (ﷺ)-এর সাহচর্য ও তাঁর পুণ্যময় ভাষণসমূহ শ্রবণ দ্বারা সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)-এর অন্তর থেকে দুনিয়ার প্রেম এবং হিংসা-বিদ্বেষ তিরোহিত হয়েছিল। তাঁদেরকে পরিশুদ্ধ করা হয়েছিল এবং তাঁরা লোভ, উচ্চাভিলাষ, বিদ্বেষ ও বদ স্বভাব হতে মুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা সর্বাংশে পবিত্র হয়ে গিয়েছিলেন। যেখানে এই মহাসম্মানিত রাসূল (ﷺ)-এর উম্মতের আউলিয়াগণের কোনো একজনের মাত্র কয়েক দিনের সান্নিধ্য লাভকারী ব্যক্তি সেই ওলীর সুন্দর নৈতিকতা ও মাহাত্ম্য হতে উপকার পায় এবং দুনিয়াবী খায়েশ হতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়, সেখানে এ কথা কীভাবে ধারণা করা যায় যে প্রিয়নবী (ﷺ)-এর সাহাবীবৃন্দ, অর্থাৎ, আমাদের মনিববৃন্দ যাঁরা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন ও নিজেদের জান-মাল তাঁর জন্যে উৎসর্গ করেছিলেন এবং নিজেদের রাজ্য তাঁর ওয়াস্তেই ত্যাগ করেছিলেন, আর তাঁরই সাহচর্যে থাকতে পছন্দ করতেন যা আত্মাসমূহের খাদ্য ছিল, তাঁরাই আবার বদ নৈতিকতা হতে মুক্ত ছিলেন না এবং তাঁদের নফসগুলোও পরিষ্কার ছিল না এবং তাঁরা এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর পচা জিনিসের জন্যে যুদ্ধ করেছিলেন? ওই সকল মহান ব্যক্তি নিশ্চয়ই অন্যান্যদের চেয়ে নির্মল ছিলেন। তাঁদের মধ্যকার মতপার্থক্য ও যুদ্ধকে আমাদের মতো বদ উদ্দেশ্যসম্পন্ন লোকদের মধ্যকার মতপার্থক্য ও যুদ্ধ-বিগ্রহের সাথে তুলনা করা কিংবা তাঁরা তাঁদের দুনিয়ারী স্বার্থে ও অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে যুদ্ধ করেছিলেন বলাটা অনভিপ্রেত। প্রিয়নবী (ﷺ)-এর সাহাবী (رضي الله عنه)-দের প্রতি এ ধরনের বাজে ধারণা পোষণ করা অনুমতিপ্রাপ্ত নয়। যে ব্যক্তি তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে চায়, তার ভালো করে জানা উচিৎ যে সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)-এর বিরুদ্ধাচরণ করা নবী করীম (ﷺ)-এরই বিরুদ্ধাচরণ, আর তাঁদের সমালোচনা করা নবী (ﷺ)-এরই সমালোচনা, যিনি তাঁদেরকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এ কারণেই ইসলামের মহান উলামামণ্ডলী বলেছেন যে নবী করীম (ﷺ)-এর সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)-এর প্রতি যে ব্যক্তি শ্রদ্ধা ও উচ্চ ধারণা পোষণ করে না, সে প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এরই প্রতি অবিশ্বাস রাখে। সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)-এর কুৎসা রটনা করার জন্যে “জামাল” (উট) ও “সিফফিনের” যুদ্ধকে অজুহাত হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। কিছু ধর্মীয় কারণে এ সকল যুদ্ধে যাঁরা হযরত আলী (رضي الله عنه)-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তাঁরা পুরস্কৃত হওয়ার যোগ্য ছিলেন।
❏ একটি হাদীস শরীফে রাসূলে কারীম (ﷺ) এরশাদ ফরমান – إِنْ أَصَبْتَ فَلَكَ عَشْرُ أُجُورٍ وَإِنِ اجْتَهَدْتَ فَأَخْطَأْتَ فَلَكَ أَجْرٌ.
“ইজতেহাদ প্রয়োগকারী মুজতাহিদ যিনি ভুল করেন, তাঁর জন্যে রয়েছে একটি সওয়াব (পুরস্কার)। আর যে মুজতাহিদ সঠিক পথপ্রাপ্ত হন, তাঁর জন্যে রয়েছে দুইটি (বর্ণনান্তরে দশটি) পুরস্কার। একটি পুরস্কার হলো ইজতেহাদ (গবেষণা) প্রয়োগের জন্যে; অপরটি সত্যপ্রাপ্তির জন্যে” ।
🔺[২১] হাকিম : আল মুস্তাদরাক, কিতাবুল আহকাম, ৪:৮৮ হাদীস নং ৭০০২।
ওই সকল মহান ইসলামী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধ হিংসা-বিদ্বেষ হতে সৃষ্ট ছিল না, বরং তা ছিল তাঁদের ইজতেহাদী পার্থক্য হতে সৃষ্ট এবং শরীয়তের আদেশ-নিষেধ পালনে তাঁদের ইচ্ছা হতে নিঃসৃত। নবী পাক (ﷺ)-এর প্রত্যেক সাহাবী (رضي الله عنه)-ই একেকজন মুজতাহিদ ছিলেন।
_____________
কিতাবঃ ঈমান ও ইসলাম
মূল: মওলানা খালেদ আল-বাগদাদী (رحمة الله)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন