আল্লাহ অতুলনীয়, তিনি সৃষ্টির প্রতি মুখাপেক্ষী নন


আল্লাহতায়া'লার সাথে সময় কিংবা দিন-রাত্রির আবর্তন সম্পৃক্ত নয়। তাঁর মধ্যে কোনো ধরনের পরিবর্তন-ই সাধিত হয় না। এ কথাও বলা যায় না যে তিনি অতীতে এ ধরনের ছিলেন, কিংবা ভবিষ্যতে আরেক ধরনের হবেন। আল্লাহ্ পাক কোনো কিছুর মধ্যে প্রবিষ্ট হন না। কোনো জিনিসের সাথে তিনি একীভূতও হন না। আল্লাহতায়া'লার কোনো শরীক, সহকারী, পথপ্রদর্শক কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী সত্তা নেই। তাঁর কোনো পিতা, মাতা, পুত্র, কন্যা কিংবা স্ত্রীও নেই। তিনি সর্বদা সকলের কাছে হাযের-নাযের, সকল জিনিস ও বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত। প্রত্যেক ব্যক্তির গ্রীবাস্থ শিরাটির চাইতেও তিনি সন্নিকটে। তবে আমরা উপরোক্ত কথানুযায়ী তাঁর উপস্থিতি, নৈকট্য বলতে যা বুঝি, বাস্তবে কিন্তু তা নয়। তাঁর নৈকট্য উলামাবৃন্দের জ্ঞান, বিজ্ঞানীদের মস্তিষ্ক দ্বারা উপলব্ধি করা অসম্ভব। মানব-যুক্তি ও বিচার-বুদ্ধি কথাগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে সক্ষম নয়। আল্লাহ্ পাক তাঁর সত্তা ও গুণাবলীতে তুলনাবিহীন এবং অসাযুজ্যপূর্ণ। তাঁর সত্তাগত গুণাবলীর মধ্যেও কোনো পরিবর্তন অথবা পৃথকীকরণ সাধিত হয় না।



আল্লাহ্ পাকের নামগুলো তওকিফী। অর্থাৎ, তাঁর নামগুলো শরীয়ত-প্রদর্শিত পন্থায় ব্যবহার করা অনুমতিপ্রাপ্ত এবং অন্য শব্দ ব্যবহার করা অনুমতিপ্রাপ্ত নয়। আল্লাহতায়া'লার নামগুলোও অশেষ। এটা সুপ্রসিদ্ধ যে তাঁর এক হাজার একটি নাম আছে। অর্থাৎ, তিনি তাঁর বান্দাদের কাছে এক হাজার একটি নাম প্রকাশ করেছেন। তবে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর শরীয়তে “আল্ আসমাউল হুসনা” নামক নিরানব্বইটি নাম-ই কেবল প্রকাশিত হয়েছে।



মাতুরিদিয়া মযহাবে “সিফাতুস্ সুবুতিয়া” আটটি। আশআরিয়া মযহাবে সাতটি। আল্লাহতায়া'লার সত্তা মোবারকের মতো তাঁর এ সব সিফাত (গুণ)-ও চিরন্তন, চিরস্থায়ী। এগুলো পুতঃপবিত্রও। সৃষ্টিসমূহের গুণাবলীর মতো এগুলো নয়। মানুষের ওপর তাঁর প্রতিটি গুণের উদাহরণ তিনি প্রতিফলিত করেছেন। এগুলো দেখে আল্লাহতায়া'লার গুণাবলী সম্পর্কে অল্প কিছুটুকু উপলব্ধি করা যায়। যেহেতু মানুষ আল্লাহকে পুরোপুরিভাবে উপলব্ধি করতে অক্ষম, সেহেতু তাঁকে উপলব্ধি করতে চেষ্টা করার কিংবা চিন্তাভাবনা করার কোনো অনুমতি-ই নেই। তাঁর আটটি গুণ তাঁর সত্তাকে গঠন করে না, আবার সেগুলো তাঁর সত্তা থেকে অসম্পৃক্ত কিছুও নয়। এ আটটি সিফাত হলো:


(১) হায়াত,


(২) এলম (সর্বজ্ঞান),


(৩) সাম’ (শ্রবণশক্তি),


(৪) বাসার (দৃষ্টিশক্তি),


(৫) কুদরত (সর্বশক্তি),


(৬) কালাম (বাকশক্তি),


(৭) এরাদা (চূড়ান্ত ইচ্ছা) এবং


(৮) তাকওয়ীন (সৃজনশীলতা)। আশ্আরী মযহাবে তাক্উয়ীন ও কুদরত মিলেই একটি গুণ। “মাশীয়্যা” ও এরাদা হলো সমার্থক শব্দ।



আল্লাহ্ তায়া'লার আটটি গুণের প্রত্যেকটি-ই অতুলনীয় এবং অপরিবর্তনীয় অবস্থায় বিরাজমান। সেগুলোর মধ্যে কোনো পরিবর্তন সাধিত হয় না। কিন্তু সৃষ্টিসমূহের সাথে সম্পৃক্ততার অনুপাতে সেগুলো সৃষ্টিসমূহে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণে প্রকাশমান। আর সৃষ্টিসমূহের ওপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে সেগুলোর অতুলনীয়তাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।  অনুরূপভাবে, যদিও আল্লাহ্ পাক-ই এতো রকম সৃষ্টি করেছেন এবং লয়প্রাপ্তি থেকে ওগুলোকে রক্ষা করছেন, তবুও তিনি একই সত্তা। তাঁর মধ্যে কোনো পরিবর্তন-ই সংঘটিত হয় না। প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি মুহূর্তেই প্রত্যেক সৃষ্টির তাঁকেই প্রয়োজন। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই তাঁর কাউকে প্রয়োজন নেই।

_____________

কিতাবঃ ঈমান ও ইসলাম

মূল: মওলানা খালেদ আল-বাগদাদী  (رحمة الله)  

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন