ঈমানের মূলনীতি


قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِيمَانِ،  –

ওই মহান ব্যক্তি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ্ (ﷺ)! এবার আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন।” ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করার এবং উত্তর পাওয়ার পর হযরত জিবরাইল আমীন (عليه السلام) রাসূলে আকরাম (ﷺ)-এর কাছে ঈমানের সারমর্ম ও প্রকৃতি জানতে চাইলেন। ঈমান অর্থ হলো কোনো সত্তাকে ত্রুটিবিহীন ও সত্যবাদী জানা এবং তাঁর প্রতি আস্থা রাখা। শরীয়তের পরিভাষায় অবশ্য এর মানে হলো এই বিষয়টিতে বিশ্বাস যে, রাসূলে আকরাম (ﷺ) আল্লাহতায়া'লার সর্বশেষ মনোনীত পয়গম্বর; আর এ কথাটি সর্বান্তকরণে মৌখিকভাবে উচ্চারণ করা এবং তিনি যা সংক্ষিপ্তভাবে এনেছেন তা সংক্ষিপ্তভাবে বিশ্বাস করা ও তিনি যা আল্লাহ্ পাকের কাছ থেকে বিস্তারিতভাবে এনেছেন তা বিস্তারিতভাবে বিশ্বাস করা; এ ছাড়া যতোবার সম্ভব ঘনঘন কলেমায়ে শাহাদাত উচ্চারণ করা। শক্তিশালী ঈমান সেটাই – যেভাবে আগুন দহন করে কিংবা সর্পের বিষ মৃত্যু ঘটায় ইত্যাদি চিরসত্যে আমরা বিশ্বাস করি এবং ওগুলো থেকে সতর্ক থাকি, ঠিক সেভাবে আমাদেরকে আল্লাহতায়া'লা ও তাঁর গুণাবলীকে মহান জানতে হবে এবং এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে, আর তাঁর প্রেম ও সৌন্দর্যের (জামাল) জন্যে প্রার্থী হতে হবে এবং তাঁর গযব (রুদ্ররোষ) ও জালাল (ভয়াল রূপ) হতে সতর্ক থাকতে হবে। মারবেলে খোদাইকৃত লেখার মতোই এই ঈমানকে আমাদের হৃদয়ের গভীরে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করতে হবে।



ঈমান ও ইসলাম হলো এক-ই। উভয়টিতেই কোনো ব্যক্তিকে কলেমায়ে শাহাদাত-এ বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। যদিও “উমুম” (সার্বিক দিকগুলো) ও “খুসুস” (বিশেষ দিকগুলো)-তে তাদের উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বিরাজমান এবং যদিও তাদের উভয়ের আক্ষরিক অর্থ পৃথক, তবু শরীয়তে তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য-ই বিরাজমান নেই।



ঈমান কি একটি মৌল উপাদান? নাকি বহু যৌগ উপাদানে গঠিত? যদি এটা যৌগ উপাদানে গঠিত হয়ে থাকে, তাহলে এর কতোগুলো অংশ আছে? আমল কিংবা এবাদত ঈমানের অন্তর্ভুক্ত কি-না? যখন “আমি ঈমান রাখি” বলা হয়, তখন কি “ইনশা’আল্লাহ্” যোগ করা উচিৎ? ঈমানের মধ্যে কি স্বল্পতা কিংবা স্ফীতি আছে? ঈমান কি একটি প্রাণী? এটা কি কোনো ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তির আয়ত্ত্বাধীন? নাকি ঈমানদারেরা চাপের মুখেই বিশ্বাস করে নিয়েছেন? যদি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে শক্তি কিংবা চাপ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে, তাহলে কেন সবাইকে বিশ্বাস করতে আদেশ দেয়া হয়েছে? এ প্রশ্নগুলো একে একে ব্যাখ্যা করতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। অতএব, এখানে আমি এগুলো আলাদা আলাদাভাবে ব্যাখ্যা করবো না। কিন্তু এটা ভালো করে জেনে রাখা দরকার যে, আশআরী ও মু’তাযেলা মতবাদ অনুযায়ী আমাদের সাধ্যাতীত কোনো কর্ম সংঘটন করার আদেশ দেয়াটা আল্লাহর পক্ষে জায়েয নয়। আর মু’তাযেলা সম্প্রদায়ের মতানুযায়ী তা সম্ভব, কিন্তু মানুষের ক্ষমতাবহির্ভূত কাজের আদেশ দেয়া আল্লাহর পক্ষে জায়েয নেই। আশআরীদের মতে এটা জায়েয, কিন্তু খোদাতায়া'লা তা আদেশ করেন নি। মানুষদেরকে আকাশে উড়তে বলা এ ধরনের একটি দৃষ্টান্ত। ঈমান কিংবা এবাদতের ক্ষেত্রে কোথাও আল্লাহ্ পাক তাঁর সৃষ্টিসমূহকে তাদের সাধ্যাতীত কোনো কাজ করতে আদেশ দেননি। এ কারণেই যে ব্যক্তি মুসলিম থাকা অবস্থায় পাগল কিংবা গাফেল (উদাসীন) কিংবা নিদ্রাচ্ছন্ন কিংবা মৃত হয়ে যায়, সে মুসলমান-ই থাকে; যদিও তার অবস্থা নিশ্চিত নয়।



এই হাদীসে ‘ঈমানের” আক্ষরিক অর্থ সম্পর্কে চিন্তা করা আমাদের উচিৎ নয়। কেননা, তদানীন্তন আরবে এমন কোনো সাধারণ মানুষও ছিলেন না, যিনি এর আক্ষরিক অর্থ জানতেন না। সত্য বটে, নবী করীম (ﷺ)-এর সাহাবীবৃন্দও তা জানতেন। কিন্তু হযরত জিবরীল (عليه السلام) শরীয়তে এর অর্থ কী তা জিজ্ঞেস করে সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)-কে ঈমানের অর্থ শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। আর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন যে ঈমান হলো ছয়টি বিষয়ের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস:

_____________

কিতাবঃ ঈমান ও ইসলাম

মূল: মওলানা খালেদ আল-বাগদাদী  (رحمة الله)  

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন