ঈমান ও ইসলাম


বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম,


নাহমাদুহু ওয়া নুসল্লি আলা রাসূলিহিল করীম, আম্মা বা’দ


এ বইটিতে (এ’তেকাদনামা) ঈমান ও ইসলাম বর্ণনাকারী নবী করীম (ﷺ)-এর একখানা হাদীস শরীফ ব্যাখ্যা করা হবে। আমি আশা করি যে, এই হাদীসটির আশীর্বাদে মুসলমানদের আকীদা-বিশ্বাস পূর্ণতাপ্রাপ্ত হবে এবং তাঁরা নাজাত (পরিত্রাণ) ও সুখ-শান্তি অর্জন করতে সক্ষম হবেন। আমি আরও আশা করি যে, আমি খালেদ আল-বাগদাদী অতিশয় পাপী হওয়া সত্ত্বেও এর দ্বারা পরিত্রাণ পাবো। আল্লাহ্ তায়া'লা যিনি কোনো কিছুর মুখাপেক্ষী নন এবং যাঁর দয়া ও নেয়ামত অগণিত ও অফুরন্ত এবং যিনি নিজ বান্দাদের প্রতি পরম করুণাময়, তাঁর একজন নাদান, নাখাস্তা বান্দা – যার জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত ও যার অন্তর অত্যন্ত কালো, ময়লা – তাকে তার অসঙ্গতিপূর্ণ কথাবার্তার জন্যে ক্ষমা করবেন এবং তার ত্রুটিপূর্ণ এবাদত-বন্দেগীও গ্রহণ করবেন। অতঃপর মিথ্যাবাদী, ধোকাবাজ শয়তানের ক্ষতি থেকেও তিনি আমাদেরকে রক্ষা করবেন এবং আমাদেরকে সুখ-শান্তি দান করবেন। নিশ্চয় তিনি দয়ালুদের সেরা এবং তিনি দাতাদেরও সেরা।


ইসলামী উলামাবৃন্দ (জ্ঞান বিশারদমণ্ডলী) বলেছেন যে প্রত্যেক বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর ও নারীর জন্যে সঠিকভাবে আল্লাহতায়া'লার ‘সিফাতুয্ যাতিয়্যা’ (সত্তাগত গুণাবলী) এবং ‘সিফাত আস্ সুবুতিয়্যা’ (প্রমাণিত গুণাবলী) সম্পর্কে জানা এবং বিশ্বাস করা অবশ্য কর্তব্য। এটাই প্রত্যেকের জন্যে প্রাথমিকভাবে ফরয (অবশ্য পালনীয়) কর্তব্য। এটা না জানাটা ওজর নয়, বরং একটি গুণাহ্। খালেদ আল-বাগদাদী (লেখক স্বয়ং) এ বইটি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও পাণ্ডিত্য অন্যদের সামনে প্রদর্শন করার জন্যে কিংবা সুনাম কুড়াবার জন্যে রচনা করিনি, বরং একটি উপহার, একটি খেদমত পেছনে রেখে যাবার জন্যেই করেছি। আল্লাহ্ পাক তাঁর ক্ষমতা দ্বারা এবং তাঁর প্রিয়নবী (ﷺ)-এর রহমতপ্রাপ্ত রূহ্ মোবারকের মাধ্যমে এই অধম খালেদকে সাহায্য করুন, আমীন!


আল্লাহতায়া'লা ভিন্ন অপরাপর সকল বস্তুকে “মা সিওয়া” বা “আলম” (সৃষ্টি, বিশ্বজগৎ) বলা হয়, যাকে মানুষেরা বর্তমানে “প্রকৃতি”ও বলে থাকে। সকল সৃষ্টি-ই অস্তিত্ববিহীন ছিল। একমাত্র আল্লাহতায়া'লাই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিসমূহ হলো “মুমকিন” (অনস্তিত্ব হতে অস্তিত্বপ্রাপ্ত) এবং “হাদীস” (শূন্য হতে অস্তিত্বপ্রাপ্ত)। অর্থাৎ, অস্তিত্ববিহীন অবস্থা হতে তারা হয়তো অস্তিত্ব পেতে পারে এবং অস্তিত্ববিহীন অবস্থায় তারা অস্তিত্ব পেয়েছে। –  

وَكَاَنَ اللهُ وَلَم يَكُنْ مَعَهُ شَئٌ“

❏ আল্লাহতায়া'লা যখন ছিলেন, তখন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না”- হাদীসটি এটাকে সত্য প্রমাণ করে।


সমগ্র বিশ্বজগৎ এবং সকল সৃষ্টি যে হাদীস্ তা প্রতীয়মানকারী দ্বিতীয় প্রমাণটি হলো এই যে, সৃষ্টি জগৎ প্রতিটি মুহূর্তেই পরিবর্তিত ও বিকশিত হচ্ছে। অপর পক্ষে, যা কাদিম (আরম্ভবিহীন) তা কখনোই পরিবর্তিত হতে পারে না। আল্লাহতায়া'লার যাত মোবারক (পবিত্র সত্তা) এবং গুণাবলী হলো কাদিম ও অপরিবর্তনীয়। সৃষ্টিসমূহে সংঘটিত পরিবর্তন অনন্ত অতীত হতে আগমনকারী নয়; সেগুলোর একটি আরম্ভ আছে। সেগুলোর নিশ্চয় কোনো বস্তু বা পদার্থ দ্বারা আরম্ভ হয়েছে যা নিশ্চয়ই অনস্তিত্ব থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল।


সমগ্র বিশ্বজগৎ যে “মুমকিন” (অনস্তিত্ব হতে অস্তিত্বপ্রাপ্ত) তা প্রতীয়মানকারী আরেকটি প্রমাণ হলো এই যে, আমাদের দৃষ্ট সৃষ্টিসমূহ হলো হাদীস্ (শূন্য হতে অস্তিত্বপ্রাপ্ত)।


জগতে দুই প্রকারের সত্তা আছে: “মুমকিন” ও “ওয়াজিবুল ওজুদ” (অস্তিত্বসম্পন্ন সত্তা)। যদি শুধুমাত্র “মুমকিন” (অনস্তিত্ব হতে অস্তিত্বপ্রাপ্ত) বিরাজ করতো কিংবা যদি “ওয়াজিবুল ওজুদ” (অবশ্যই বিরাজমান) বিরাজ না করতেন, তাহলে কিছুই অস্তিত্বসম্পন্ন থাকতো না। এ কারণেই ’মুমকিন’ নিজ হতে অস্তিত্ব পেতে পারে না। যদি কোনো শক্তি এর ওপর প্রভাব বিস্তার না করতো, তাহলে এটা সবসময়ই অস্তিত্ববিহীন থাকতো এবং অস্তিত্বসম্পন্ন হতে পারতো না। যেহেতু একটি “মুমকিন” নিজেকেই সৃষ্টি করতে অক্ষম, সেহেতু এটা অবশ্যই অন্যান্য ‘মুমকিন’কে সৃষ্টি করতেও অক্ষম। ’মুমকিন’কে সৃষ্টি করেছেন যে সত্তা, তিনি অবশ্যঅবশ্যই ’ওয়াজিবুল অজুদ’ হবেন। “আলম” (বিশ্বজগৎ)-এর অস্তিত্ব-ই প্রতিভাত করে যে এর একজন স্রষ্টা, যিনি এটাকে অস্তিত্বহীনতা হতে সৃষ্টি করেছেন, তিনিও বিরাজমান। অতএব, সকল ’মুমকিনের’ তথা সৃষ্টিসমূহের একক স্রষ্টা হলেন ‘ওয়াজিবুল অজুদ’ যিনি নিজে হাদীস (শূন্য হতে অস্তিত্বপ্রাপ্ত) কিংবা মুমকিন নন, বরং সর্বদা অস্তিত্বসম্পন্ন। “ওয়াজিবুল অজুদ” অর্থ হলো এর অস্তিত্ব অন্য কোনো কিছু থেকে প্রাপ্ত নয়, বরং নিজ হতেই অস্তিত্বসম্পন্ন। অর্থাৎ, এটা সর্বদা স্ব-অস্তিত্বসম্পন্ন এবং কারো দ্বারা সৃষ্ট নয়। যদি এ রকম না হতো, তবে এটাকে অন্য কারো দ্বারা সৃষ্ট একটি সৃষ্টি (মুমকিন ও হাদীস্) হতে হতো। আর এ বিষয়টি উপরোল্লিখিত সিদ্ধান্তটির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। পারসিক “খোদা” শব্দটির মানেও হলো “সর্বদা স্ব-অস্তিত্বসম্পন্ন”।


আমরা সকল শ্রেণীর সত্তাকে একটি বিস্ময়কর নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ দেখতে পাই এবং বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত এই নিয়মের নিত্যনতুন আইন-কানুন আবিষ্কার করে থাকে। এই নিয়মের স্রষ্টা নিশ্চয় “হাই” (চিরঞ্জীব), “আলিম” (সর্বজ্ঞানী) “কাদির” (সর্ব শক্তিমান), “মুরিদ” (চূড়ান্ত ইচ্ছার মালিক), “সামিউন” (সর্ব-বিষয় শ্রবণকারী), “বাসির” (সর্ব-দ্রষ্টা), “মুতাকাল্লিম” (সর্ব বাক্ শক্তিসম্পন্ন)। কেননা, মৃত্যু, অজ্ঞতা, অক্ষমতা, শ্রবণ শক্তিহীনতা, দৃষ্টি শক্তিহীনতা, বাক্ শক্তিহীনতা ইত্যাদি হচ্ছে ত্রুটি-বিচ্যুতি, অপূর্ণতা। এই আলম (জগত) বা “কায়নাত” (সকল সত্তা) যিনি এ রকম নিয়মে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি সেগুলোকে ধ্বংস হতে রক্ষা করছেন, তাঁর পক্ষে ওই ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতির অধিকারী হওয়া একদম অসম্ভব। উপরন্তু, আমরা উপরোক্ত পূর্ণতার গুণাবলী সৃষ্টিসমূহের মধ্যেও অবলোকন করে থাকি। তিনি ওই সকল গুণ তাঁর সৃষ্টির মধ্যেও সৃষ্টি করেছেন। যদি এ সব গুণ তাঁর মধ্যে বিরাজ না করতো, তাহলে কীভাবে তিনি এগুলো তাঁর সৃষ্টিসমূহের মধ্যে সৃষ্টি করতেন। তাঁর সৃষ্টিসমূহ কি তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতো না, যদি তিনি ওই সব গুণবিবর্জিত হতেন?


আমরা আরও যোগ করবো, যিনি এ সকল সত্তার জগৎসমূহ সৃষ্টি করেছেন, তাঁর মধ্যে পূর্ণতার সকল গুণ ও মাহাত্ম্য থাকা উচিৎ এবং কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি না থাকা-ই উচিৎ। কেননা, যে সত্তা ক্রটিপূর্ণ সে সৃষ্টিশীল হতে পারে না।


এ সব যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ ছাড়াও আয়াত ও হাদীসসমূহ সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে যে আল্লাহতায়া'লা পূর্ণতার অধিকারী। সুতরাং এতে সন্দেহ পোষণ করা অনুমতিপ্রাপ্ত নয়। সন্দেহ কুফর বা অবিশ্বাসের জন্ম দেয়। তাঁর সত্তা, গুণাবলী কিংবা কর্মের মধ্যে কোনো ত্রুটি, অনিয়ম কিংবা পরিবর্তন নেই।
_____________
কিতাবঃ ঈমান ও ইসলাম
মূল: মওলানা খালেদ আল-বাগদাদী  (رحمة الله)  
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন