হযরত রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর উম্মতের আউলিয়ামণ্ডলীর (رحمة الله) মধ্যে তাঁর খলীফা হওয়ার যোগ্য ছিলেন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) যাঁকে আউলিয়ায়ে কেরাম ও ইমামবৃন্দ অধিক ভালোবাসতেন এবং যিনি অন্যান্যদের চেয়ে খেলাফতের জন্যে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন ছিলেন।
أُحَدِّثُكَ بِأَفْضَلِ النَّاسِ كَانَ بَعْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قُلْتُ بَلَى فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ
❏ পয়গম্বর আলাইহিমুস সালাম-বৃন্দের পরে তিনি-ই আগত ও ভবিষ্যতে আগমনকারী ইনসানদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সৌভাগ্যবান।
🔺[১৭] আহমদ : আল মুসনাদ, ২:৪৯২ হাদীস নং ১০৫৪।
খলীফা হওয়ার মর্যাদা ও সম্মান তিনি-ই সর্বপ্রথম অর্জন করেন। আল্লাহতায়া'লার দয়া ও রহমতে ইসলামের সূচনার পূর্বেও তিনি মূর্তি পূজা করেন নি। কুফর (অবিশ্বাস) ও গোমরাহী (পথভ্রষ্টতা)-এর ত্রুটি হতে তাঁকে হেফাযত করা হয়েছিল।
فَلَا أُخْبِرُكَ بِخَيْرِ النَّاسِ كَانَ بَعْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِي بَكْرٍ قُلْتُ بَلَى قَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-
❏ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه)-এর পরে ইনসানকুল শ্রেষ্ঠ হলেন দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) যাঁকে আল্লাহতায়া'লা তাঁর মাহবুব হযরত রাসূলে করীম (ﷺ)-এর বন্ধু হিসেবে পছন্দ করেছিলেন।
হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর পরে শ্রেষ্ঠ হলেন তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান ইবনে আফফান যিন্নূরাইন (رضي الله عنه) যিনি নেয়ামত ও দয়ার খনি এবং বিনয়, বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের উৎস ছিলেন।
হযরত উসমান (رضي الله عنه)-এর পরে শ্রেষ্ঠ হলেন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর চতুর্থ খলিফা হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (رضي الله عنه) যিনি বিস্ময়কর গুণাবলীর অধিকারী এবং আল্লাহতায়া'লার আসাদ (সিংহ) ছিলেন।
❏ হযরত হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنه) তাঁর পরে খলিফা হন। হাদীসে উল্লিখিত الْخِلَافَةُ بَعْدِي ثَلَاثُونَ سَنَةً – 🔺[১৮]
(ক) বাযযার : আল মুসনাদ, ৯:২৮০।
(খ) ইবনে হিব্বান : আস সহীহ, ১৫:৩৯২ হাদীস নং ৬৯৪৩।
খেলাফতের ত্রিশ বছর তাঁর শাসনামল দ্বারা পূর্ণ হয়। তাঁর পরে শ্রেষ্ঠ হলেন হযরত হুসাইন ইবনে আলী (رضي الله عنه) যিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর দুই চোখের মণি ছিলেন।
এই সকল শ্রেষ্ঠ গুণাবলী উপরোক্ত পুণ্যাত্মাগণের মধ্যে বিরাজ করার ভিত্তি হলো তাঁদের অধিক সওয়াব অর্জন, ইসলামের ওয়াস্তে স্বদেশ ও স্বজন ত্যাগ, অন্যান্যদের পূর্বে মুসলমান হওয়া, সর্বোচ্চ মাত্রায় রাসূলে আকরাম (ﷺ)-এর তাবেদারী ও তাঁর সুন্নাতের কাছে আত্মসমর্পণ, নবী করীম (ﷺ)-এর শরীয়তকে প্রচার-প্রসার করার মহৎ উদ্দেশ্যে সংগ্রাম এবং অবিশ্বাস, ফিতনা (গণ্ডগোল, হট্টগোল) ও দুর্নীতির মূলোৎপাটন।
হযরত আলী (رضي الله عنه) করীম ইসলাম গ্রহণ করেন সবার আগে, একমাত্র হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)-এর ক্ষেত্র ছাড়া। তিনি তখন একজন বালক ছিলেন এবং তাঁর কোনো সম্পত্তিও ছিল না; তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর ঘরে বসবাস করতেন এবং তাঁর খেদমত করতেন। যেহেতু হযরত আলী (رضي الله عنه) ও তাঁর পুত্রবৃন্দ রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকটাত্মীয় ছিলেন এবং হুজুর পূর নূর (ﷺ)-এরই মোবারক রক্তের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিলেন, সেহেতু তাঁদেরকে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হযরত ওমর ফারুক (رضي الله عنه) হতে শ্রেষ্ঠ হয়তো বলা যেতে পারে; কিন্তু এ শ্রেষ্ঠত্ব বা মাহাত্ম্য সকল ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব নয় এবং সকল ক্ষেত্রেই তাঁদেরকে এটা ওই সকল মহান ব্যক্তিত্ব হতে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়নি। এর দৃষ্টান্ত হলো হযরত খিযির (عليه السلام) ও হযরত মূসা (عليه السلام)-এর ঘটনাটির মতো, যে ঘটনায় খিযির (عليه السلام) হযরত মূসা (عليه السلام)-কে কিছু বিষয় শিক্ষা দিয়েছিলেন।
হযরত মা খাদেজা (رضي الله عنه) ও হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে হযরত মা ফাতেমা (رضي الله عنه) উচ্চমর্যদাসম্পন্ন ছিলেন। কেননা, তিনি নূর নবী (ﷺ)-এর রক্ত-সম্পর্কের। কিন্তু এক কিসিমের শ্রেষ্ঠত্ব সকল ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিফলন করে না। এঁদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা নিরূপণ করতে গিয়ে উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন। হাদীস শরীফ হতে উপলব্ধি করা যায় যে এই তিন জন ও হযরত মরিয়ম এবং ফেরাউনের স্ত্রী হযরত আসিয়া দুনিয়ার নারীকুল শ্রেষ্ঠ।
فَاطِمَةَ سَيِّدَةُ نِسَاءِ أَهْلِ الجَنَّةِ وَأَنَّ الحَسَنَ وَالحُسَيْنَ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الجَنَّةِ.
❏ – “বেহেশতের নারীকুল শ্রেষ্ঠ হলো ফাতেমা (رضي الله عنه)
🔺[১৯]
(ক) বুখারী : আস সহীহ, মানাকিবু ফাতিমাতুয যাহরা, ২০:৫।
(খ) তিরমিযী : আস সুনান, ৬:১২৭ হাদীস নং ৩৭৮১।
❏ এবং বেহেশতের যুবককুল শ্রেষ্ঠ হলো হাসান (رضي الله عنه) ও হুসাইন (رضي الله عنه)” — হাদীসটি একটি ক্ষেত্রের শ্রেষ্ঠত্বকেই ইশারা করেছে।
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সাহাবীদের মধ্যে পরবর্তী শ্রেষ্ঠ হলেন ”আশারাত্ আল্ মুবাশ্শারা”– দশজন পুণ্যাত্মা, যাঁদেরকে বেহেশতী হওয়ার শুভসংবাদ দ্বারা ধন্য করা হয়েছে। তাঁদের পরে বদরের জেহাদে অংশগ্রহণকারী তিন শ তের জন মুসলমান-ই হলেন শ্রেষ্ঠ। অতঃপর শ্রেষ্ঠ হলেন উহুদ জেহাদে অংশগ্রহণকারী সাত শ জন বীর মুসলমান। তাঁদের পরে শ্রেষ্ঠ হলেন “বি’য়াত আর-রিদ্ওয়ান” নামক চৌদ্দ শ মুসলমান যাঁরা নবী করীম (ﷺ)-এর কাছে গাছের নিচে আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছিলেন।
_____________
কিতাবঃ ঈমান ও ইসলাম
মূল: মওলানা খালেদ আল-বাগদাদী (رحمة الله)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন