যখন তিনি মক্কা মোয়াযযমায় নিজ বিছানায় শায়িত ছিলেন, তখন তাঁকে জাগানো হয় এবং তাঁর পবিত্র স্বশরীরে তাঁকে জেরুজালেমে অবস্থিত মসজিদুল আকসায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং তারপর আসমানে এবং তারও পরে আল্লাহতায়া'লা যে সকল স্থান নির্ধারণ করেছিলেন, সাত আসমানের সেই সব স্থানে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মে’রাজ সম্পর্কে আমাদেরকে এভাবে বিশ্বাস করতে হবে। মে’রাজ কীভাবে হয়েছিল, তা বিস্তারিত লেখা হয়েছে বহু মহামূল্যবান গ্রন্থে, বিশেষ করে -
❏ শেফা শরীফ পুস্তকে,
।لَمَّا أُسْرِيَ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ انْتَهَى بِهِ إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى، وَهِيَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ
হযরত জিবরাইল আমীনের সাথে তিনি মক্কা হতে ষষ্ঠ ও সপ্তম আসমানে অবস্থিত সিদরাত আল-মুন্তাহা নামের একটি গাছের কাছে গিয়েছিলেন।
🔺[৯] ইবনে আবী শায়বা : আল মুসনাদ, ১:১৯৭ হাদীস নং ২৯১।
❏ কোন জ্ঞান, কোন ঊর্ধ্বগমন-ই ইতিপূর্বে এর বেশি যেতে পারেনি। সিদরাত আল-মুন্তাহা‘য় রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) হযরত জিবরাইল আমীন (عليه السلام)-কে তাঁর ছয় শ পাখাসহ নিজস্ব (আসল) সুরতে দেখতে পান। হযরত জিবরাইল (عليه السلام) সিদরা-তে থেকে যান।
لَمَّا أُسْرِيَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِدَابَّةٍ دُونَ الْبَغْلِ وَفَوْقَ الْحِمَارِ , يَضَعُ حَافِرَهُ عِنْدَ مُنْتَهَى طَرَفِهِ , يُقَالُ لَهُ: الْبُرَاقُ
মক্কা হতে জেরুজালেম কিংবা সাত আসমানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে “বোরাকে” বহন করে নেয়া হয়েছিল, যা বেহেশতের প্রাণী এবং যা একটি খচ্চরের চেয়ে ছোট কিন্তু একটি গাধার চেয়েও বড় আকৃতির।
🔺[১০] ইবনে আবী শায়বা : আল মুসনাদ, ৬:৩১২ হাদীস নং ৩১৬৯৯।
❏ চোখের পলকে এটা চোখের আড়ালে চলে যেতে সক্ষম। মসজিদে আকসায় এশা কিংবা ফজরের নামাযে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) অন্যান্য নবী আলাইহিমুস সালাম-বৃন্দের ইমাম হন। আম্বিয়া (عليه السلام)-মণ্ডলীর রূহ্ মোবারক তাঁদের জিসম্ (দেহ)-সহ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জেরুসালেম হতে সপ্তম আসমান পর্যন্ত তাঁকে মে’রাজ নামক একটি অজ্ঞাত সিঁড়ি দ্বারা ঊর্ধ্ব-ভ্রমণ করানো হয়।سَلَّمَتْ عَلَيْهِ الْمَلَائِكَةُ
পথিমধ্যে ডান ও বাম ধারে ফেরেশতাকুল সারিবদ্ধ হয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে সালাত-সালাম ও সম্ভাষণ জানান এবং তাঁর প্রশংসা করেন।
🔺[১১] আব্দুর রাযযাক : আল মুসান্নাফ, ২:১৬২।
প্রতিটি আসমানেই হযরত জিবরাইল আমীন (عليه السلام) রাসূলে আকরাম (ﷺ)-এর শুভাগমণের শুভসংবাদ ঘোষণা করেন। প্রতিটি আসমানেই রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) একজন করে পয়গম্বরের (عليه السلام) সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং সালাম জানান। সিদরাতে তিনি বহু আশ্চর্যজনক জিনিস দেখতে পান, বেহেশতের নেয়ামত এবং দোযখের শাস্তিও দেখতে পান। তিনি আল্লাহতায়া'লার জামাল (সৌন্দর্য) দেখার আকাঙ্ক্ষা ও সুখানুভূতি ছাড়া বেহেশতের নেয়ামতসমূহ দেখেননি। সিদ্রাতুল মুন্তাহা পার হয়ে তিনি একাই এগিয়ে চললেন বহু নূরের (জ্যোতির) মধ্য দিয়ে। তিনি ফেরেশতাদের কলমসমূহের আওয়াজ শুনতে পেলেন। তিনি সত্তর হাজার পর্দার ভেতর দিয়ে অগ্রসর হলেন। এক পর্দা হতে অপর পর্দার দূরত্ব হলো পাঁচ শ বছরের যাত্রাপথ। অতঃপর “রফরফ্” নামক একটি ফরাশ (বাহন), যেটা সূর্যের চেয়েও উজ্জ্বল, সেটাতে চড়ে তিনি কুরসির মধ্য দিয়ে আরশে পৌঁছুলেন। তিনি আরশ্ থেকে বেরিয়ে গেলেন; স্থান- কাল-পাত্রের জগত হতেও বের হয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি এমন এক মকামে পৌঁছুলেন যেখানে আল্লাহতায়া'লার কালাম শোনা যায়।
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আল্লাহতায়া'লাকে উপলব্ধি ও ব্যাখ্যার অতীত এমন এক পন্থায় দেখতে পান, যেভাবে স্থান-কালের ঊর্ধ্বে পরবর্তী জগতে আল্লাহতায়া'লার দর্শন পাওয়া যাবে। তিনি শব্দ ও অক্ষর ছাড়াই আল্লাহতায়া'লার সাথে কথা বলেন। তিনি খোদা তায়া'লার প্রশংসাস্তুতি করেন। তাঁকেও অসংখ্য উপহার ও সম্মান দেয়া হয়।
فُرِضَتْ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الصَّلَاةُ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ الصَّلَاةُ خَمْسِينَ، ثُمَّ نُقِصَتْ حَتَّى جُعِلَتْ خَمْسًا
❏ তাঁর প্রতি এবং তাঁর উম্মতের প্রতি দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাযের এক কঠিন দায়িত্ব অর্পণ করা হয়, যা হযরত মূসা (عليه السلام)-এর মধ্যস্থতায় পাঁচ ওয়াক্তে কমিয়ে আনা হয়।
🔺[১২] আব্দুর রাযযাক : আল মুসান্নাফ, ১:৪৫২ হাদীস নং ১৭৬৯।
ইতিপূর্বে কেবলমাত্র সকালে, বিকেলে কিংবা রাতেই নামায আদায় করা হতো। এতো বড় দীর্ঘ ভ্রমণশেষে এবং অনেক নেয়ামত ও উপহার লাভের পর এবং বহু বিস্ময়কর জিনিস দর্শন ও শ্রবণের পর তিনি তাঁর বিছানায় ফিরে আসেন, যা তখনো শীতল হয়ে যায়নি। আমরা এ পর্যন্ত যা লিখেছি তা আংশিকভাবে কুরআন মজীদ থেকে, আর আংশিকভাবে হাদীস শরীফ থেকে গৃহীত হয়েছে। এগুলোর সবই বিশ্বাস করা ওয়াজিব নয়। তবু যেহেতু আহলে সুন্তাতের উলামাবৃন্দ এগুলো বর্ণনা করেছেন, সেহেতু যারা এগুলো অস্বীকার করবে, তারা আহলে সুন্নাত হতে খারিজ (বিচ্যুত) হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো আয়াত কিংবা কোনো হাদীস্ বিশ্বাস করবে না, সে কাফের (অবিশ্বাসী) হয়ে যাবে।
_____________
কিতাবঃ ঈমান ও ইসলাম
মূল: মওলানা খালেদ আল-বাগদাদী (رحمة الله)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন