ইমাম সাহেব নামাজ অবস্থায় সম্পূর্ণভাবে মেহরাবের মধ্যে নামাজের জন্য দন্ডয়মান হওয়া

 

প্রশ্নঃ ইমাম সাহেব নামাজ অবস্থায় সম্পূর্ণভাবে মেহরাবের মধ্যে নামাজের জন্য দন্ডয়মান হওয়া, যাতে ইমামের অবস্থা সম্পর্কে অর্থাৎ ইমামের নিয়ত বাধা, রুকু করা, সিজদা করা ইত্যাদি কর্ম ও আমল সম্পর্কে মুক্তাদীগণের নিকট সম্পূর্ণভাবে লুকায়িত থাকে, মুক্তাদীগণের দৃষ্টিগোচর না হয় এমতাবস্থায় নামাজের কি হুকুম?



উত্তরঃ ইমাম সাহেব মেহরাবের ভিতরে এমনভাবে দন্ডয়মান হওয়া, যাতে ইমাম সাহেবের রুকু, সিজদা ইত্যাদি কর্ম সম্পর্কে মুক্তাদীগণের দৃষ্টিগোচর হয় না, এমতাবস্থায় মাকরুহ। হ্যাঁ যদি ইমাম এমন অবস্থায় দন্ডায়মান হয় যাতে ইমামের অবস্থা সম্পর্কে মুক্তাদীগণ সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত, তাহলে তা মাকরূহ নয়।



যদি ইমাম সাহেব নির্দিষ্ট জায়গায় ইমামতি করতেছেন, আর মুক্তাদীগণ বারান্দা কিংবা মসজিদের মাঠে, যদিওবা মুক্তাদীগণ ইমামের অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত, এক্ষেত্রে মাকরূহ ব্যতীত নামাজ জায়েয।৭৮


➥৭৮. দুররুল মুখতার আলা রদ্দুল মুহতার, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬৪৫, অধ্যায়-বাবু মা’বাদুস্ সালাত।


 


প্রশ্নঃ নামাজের মধ্যে হুজুর নবীউল আন্বিয়া বোরহানুত্ তৌহীদ মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর খেয়াল আসাতে নামাজ ফাসেদ হবে? কিংবা কোন প্রকার দোষনীয় হবে কিনা? কোন কোন অনুপযুক্ত ও অজ্ঞ লোকের ধারণা এর দ্বারা নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে।



উত্তরঃ নামাজের মধ্যে শাহাদাতে তৌহিদ (একত্ববাদে স্বাক্ষী) মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এর খেয়াল ধারণা আসা এটি একটি রূহানী তথা আত্মা ও ঈমানী খোরাক দ্বারা সম্মানিত হয়ে থাকে। কাজেই কিভাবে নামাজ ফাসেদ হবে? হুজুর আলাইহিস সালামের খেয়াল মোবারক নামাজে আসাতে নামাজ ফাসেদ হবে না, বরং হুজুর (ﷺ) এর ধ্যান নামাজে আসাটা হচ্ছে নামাজ কবুল ও পরিপূর্ণতার স্তরে পৌঁছা।



কেননা আত্তাহিয়াতু ও দরূদ শরীফের মধ্যে মানুষের অন্তরে হুজুর রাহমাতুল্লিল আলামিনের খেয়াল অবশ্যই আসবে, আর এটিই হচ্ছে ঈমানের চাহিদা, যা সম্মান হিসেবে, ইবাদত হিসেবে নয়। কাজেই রাসূলের খেয়াল আসাতে নামাজ ফাসেদ হবে না। ৭৯


➥৭৯.  সহীহ মুসলিম শরীফ, পৃষ্ঠা-৭৮।


 


মাসআলাঃ মসজিদের ভিতরে জায়গা থাকা সত্ব্ওে মসজিদের ছাদের উপর এককভাবে হউক কিংবা জামাতে হউক নামাজ পড়া জায়েয। তবে ওজর তথা কারণ ব্যতীত এরকম করা মাকরূহ হতে খালি নয়। তবে শর্ত হচ্ছে ইমামের বরাবর কিংবা ইমামের আগে দাঁড়ানো যেন না হয়।  ৮০


➥৮০. ফতোয়ায়ে শামী, ১ম খণ্ড, ৬৫৬পৃষ্ঠা, আহকামুল মসজিদ ও ফতোয়ায়ে কাযীখান।


 


মাসআলাঃ ওলামায়ে আহনাফ ও অধিকাংশ ইমামদের মতে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামায পাঁচটি।



প্রথমত, ফযরের দুই রাকাত সুন্নাত, দ্বিতীয়- মাগরীবের ফরয নামাযের পর দুই রাকাত সুন্নাত, তৃতীয়- যোহরের ফরযের নামাযের পর দুই রাকাত সুন্নাত, চতুর্থ- এশার ফরয নামাযের পর দুই রাকাত সুন্নাত, পঞ্চম- যোহরের ফরয নামাযের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত। এই পাঁচটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। ৮১


➥৮১. শরহে মুসনাদে ইমাম আযম, পৃষ্ঠা-১৫৮।


 


মাসআলাঃ ফজর ও যোহরের ফরয নামাযের পূর্ব ব্যতীত অন্য কোন ওয়াক্তের ফরজের পূর্বে সুন্নাত পড়া আবশ্যক নয়।



মাসআলাঃ যদি জামাত শুরু তথা আরম্ভ হয়ে গেছে কিংবা জামাত শুরু হচ্ছে এমতাবস্থায় কোন সুন্নাত কিংবা নফল নামায শুরু না করা আবশ্যক। ৮২


➥৮২. ইসলামী ফিকহ্, পৃষ্ঠা-২৪৭।



মাসআলাঃ যেখানে ফরয নামায আদায় করা হয় সেখানে নফল নামায না পড়া উত্তম। হুযূর (ﷺ) এরশাদ ফরমায়েছেন- ইমাম সে স্থানে নফল নামায না পড়বে যেখানে ফরয নামায আদায় করেছে। অর্থাৎ ফরয নামায পড়ার স্থান হতে একটু নড়ে-চড়ে নফল নামায পড়বে।



মাসআলাঃ ফরয ও বিতির নামায ব্যতিত অন্য কোন নামাযের কাযা ওয়াজিব নয়।



মাসআলাঃ সুন্নাত নামায সমূহের কাযা ওয়াজিব নয়। কেবলমাত্র ফজরের সুন্নাত নামায ব্যতিত, ফজরের সুন্নাতের ব্যাপারে হাদিস শরীফে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।



মাসআলাঃ জানা আবশ্যক যে- বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে সুন্নাত নামায সমূহ ফরয নামাযকে পরিপূর্ণকারী।  ৮৩


 ➥৮৩. দুররে মুখতার।


 


মাসআলাঃ অসুস্থ ব্যক্তি যদি নামাযে কেরাত পড়ার শক্তি না থাকে এ ক্ষেত্রে কেরাত ব্যতীত নামায পড়া জায়েয। ৮৪


➥৮৪. ছেরাজিয়া হাশিয়ায়ে ক্বাজী খান, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১১১।



مريض لم يقدر على القرأة فصلى بلا قرأةٍ جازت



মাসআলাঃ জুমার দিন নাবালেগ ছেলে খুতবা দেয়া জায়েয নাই। ৮৫


 ➥৮৫.  ছেরাজিয়া, হাশিয়ায়ে ক্বাজী খাঁন, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১০০।


 


মাসআলাঃ তারাহবীর নামায ওযর ব্যতিত বসে পড়া জায়েয। যদিওবা ইমাম বসা অবস্থায় আর মুক্তাদী দন্ডায়মান তাও জায়েয। ৮৬


➥৮৬. ছেরাজিয়া হাশিয়ায়ে ক্বাজী খাঁন, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১১৯।


 


التراويح قاعدا بغير عذرجائز لو صلى الامام قاعدا والقوم قائمًا جاز .


__________________

কিতাব : মুনীয়াতুল মুছ্লেমীন (মাসআলা-মাসায়েল) [২য় খণ্ড]

মূলঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী (রহঃ)

সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন