বিভিন্ন বিষয়ের উপর গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা


❏ মাসয়ালা: (৩০৩)


জারজ সন্তান যখন মুসলমান জ্ঞানী (আকল সম্পন্ন) নামাজ, রোজা ইত্যাদির পাবন্দী (আদায়কারী) হবে। তার জবেহকৃত পশু মাকরূহ ব্যতীরেকে জায়েজ।



❏ মাসয়ালা: (৩০৪)


লোক (মানুষ) ধ্বংস হয়ে গিয়াছে বলাটা নিষেধ।



➠হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, হুজুর (ﷺ) এরশাদ ফরমায়েছেন:


 ان رسول الله صلّى الله عليه وسلّم قال اذا قال الرجل هلك الناس فهوا هلكم.


অর্থাৎ: যখন কোন ব্যক্তি এই কথা বলে যে- লোকগণ হালাক (ধ্বংস) হয়ে গেছে। তবে এক্ষেত্রে উক্ত ধরনের কথা বলা ব্যক্তিই অধিক ধ্বংস হওয়ার অধিকারী।


অর্থাৎ কোন ব্যক্তি লোকদেরকে নিকৃষ্ট ও অনুপযুক্ত মনে করে এবং নিজের আমিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে বলে লোকগণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে এধরনের মতপোষণকারী ব্যক্তি নিজেই অহংকারের শাস্তি হিসাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্যবান লোকদের ইহকাল ত্যাগের উপর আফসোস করার নিমিত্তে বলে থাকে লোক ধ্বংস হয়ে গেছে কিংবা নিঃশেষ হয়ে গেছে, অথবা কোন বলা মুসিবত ও বিপদ অবতরনের সময় যদি লোক ধ্বংস হয়ে গেছে এই কথা বলো তাহলে উক্ত কথা বর্ণনাকারী ব্যক্তি উপরোলি­খিত আজাবের স্বীকার হবে না।



❏ মাসয়ালা: (৩০৫)


যখন একটি ঘটনার ব্যাপারে দু’টি বর্ণনা বিদ্যমান থাকে। তন্মধ্যে একটি না সূচক আর অপরটি হ্যাঁ সূচক। তবে এক্ষেত্রে উসূলে হাদীস শাস্ত্রবীদদের মতে হ্যাঁ সূচক হাদীসটি না সূচক হাদীসের উপর প্রাধান্য ও অগ্রাধিকার যোগ্য।



❏ মাসয়ালা: (৩০৬)


যে কোরআন মজীদ হযরত জিবরীল আলাইহিস্সালাম হযরত রাসূলে করিম (ﷺ)-এর উপর নিয়ে এসেছিলেন তাতে সতর হাজার আয়াত ছিল। বর্তমান বিদ্যমান কোরআন শরীফে ছয় হাজার দুই শতের কাছাকাছি আয়াত রয়েছে।  


➥ [শরহে মুসলিম, ১ম খখন্ড, ৩০২পৃষ্ঠা]



❏ মাসয়ালা: (৩০৭)


➠হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, কিয়ামত নিকটবর্তী হযরত ঈসা (عليه السلام) অবতীর্ণ হওয়ার সময়কালে লোকদের মধ্যে মাল-সম্পদ এমন অধিকহারে বৃদ্ধি পাবে যে ওয়াফয়েদুল মালা হাত্তা লাইয়াক বালুহু আহাদা অর্থাৎ অধিক পরিমাণে মাল-সম্পদে পরিপূর্ণ হবে এমনকি মাল-সম্পদ লওয়ার কেউ থাকবে না। (কাউকে মাল-সম্পদ স্বইচ্ছায় দিতে চাইলেও নিবেনা)


 وايضا وليد عون الى المال فلا يقبله احد


এবং লোকদেরকে সম্পদ গ্রহণের জন্য ডাকা হলেও, কেউ মাল-সম্পদ গ্রহণের জন্য আসবে না।  


➥ [শরহে মুসলিম, ১ম খন্ড, ২৬০-৬১ পৃষ্ঠা বাবে নুজুলে ঈসা (আ:)]



❏ মাসয়ালা: (৩০৮)


বর্তমানে দুনিয়ার (পৃথিবীর) বয়স ৫৩ লক্ষ ৬০ বৎসর।  


➥ [তাফসীরে নুরুল এরফান ৫৫৬ পৃষ্ঠা ও খাজায়েনুল এরফান]



❏ মাসয়ালা: (৩০৯)


কোন অলী নবীর সমপর্যায় কিংবা নবীর স্তরে পৌঁছতে পারবে না।



❏ মাসয়ালা: (৩১০)


কোন ব্যক্তি এমন মর্তবায় পৌঁছতে পারে না যে, নামাজ রোজা তথা শরীয়তের আদেশ নিষেধ তার থেকে রহিত। অর্থাৎ প্রত্যেকই শরীয়তের হুকুম আহকাম পালন করা আবশ্যক।


যেখানে সৈয়্যদুল কাওনাইন (ﷺ) আল্লাহর আদেশ নিষেধ যথাযথ পালন করেছেন, সেখানে আর কারো ক্ষেত্রে কোন প্রশ্নই আসতে পারে না।



❏ মাসয়ালা: (৩১১)


কোরআন মজীদ ও হাদিস শরীফের জাহেরী তথা বাহ্যিক অর্থ বর্জন করে কেবল বাতেনী তথা আধ্যাত্মিক ও গুপ্ত অর্থ বুঝা ও অনুভব করা গোমরাহী ও কুফুরী।



❏ মাসয়ালা: (৩১২)


পবিত্র কোরআনের আয়াত ও বিশুদ্ধ হাদিস অগ্রাহ্য ও রদ করে মনগড়া ও অহেতুক রায় কায়েম করা কুফুরী।



❏ মাসয়ালা: (৩১৩)


গুনাহ ও পাপ কর্মকে হালাল ও বৈধ বলে ধারণা করা এবং নেক ও পূণ্য মনে করা কুফুরী।



❏ মাসয়ালা: (৩১৪)


শরীয়তের সঠিক বিধানের উপর মিথ্যা অপবাদ ও কলঙ্ক লেপন কুফুরী।



❏ মাসয়ালা: (৩১৫)


যখন উম্মুল মো’মেনীন হযরত খাদীজাতুল কুব্রা রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহার সাথে হুজুর (ﷺ)-এর শাদী মোবারক হয়েছিল তখন হুজুর (ﷺ)-এর বয়স ছিল ২৫ বছর ২ মাস ১০দিন, আর হযরত খাদীজাতুল কুবরা রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহার বয়স ছিল ৪০ বছর এবং যখন উম্মুল মো’মেনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহার সাথে হুজুর (ﷺ)-এর শাদী মোবারক হয়েছিল তখন হুজুর (ﷺ)-এর বয়স শরীফ ছিল ৬০ বছর ৬ মাস আর হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রাদ্বিআল্লাহু তা’আলা আনহার বয়স ছিল ৬ বছর। হুজুর (ﷺ)-এর ওফাত শরীফের সময় আয়েশা সিদ্দিকার বয়স ছিল ৯ বছর।  


➥ [তারিখুল ইসলাম]



❏ মাসয়ালা: (৩১৬)


বুজুর্গানে দ্বীনের হাত চুম্বন করা জায়েজ, আর কদম চুম্বন করা কোন কোন বর্ণনা মতে জায়েজ বলা হয়েছে।



❏ মাসয়ালা: (৩১৭)


খাবারের মধ্যে তিনটি ফরয,


(১) হালাল খাদ্য খাওয়া


(২) আল্লাহ্পাক জাল্লা শানুহুর রিজিক মনে করে খাওয়া


(৩) নিজের ওমরকে আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগীতে ব্যয় করার জন্য খাওয়া। যে ব্যক্তি এ তিনটি ফরজ না জানে তার জন্য খানা খাওয়া হারাম। কেননা তা ইহুদী, নাছারা ও মুশরিকদের খানার সাদৃশ্য।  


➥ [হুজ্জাতুল ইসলাম ৮ পৃষ্ঠা]



❏ মাসয়ালা: (৩১৮)


ওয়াজ মাহফিল ও ইলম শিক্ষার মজলিসে যখন আলেম বলে:


صلوا على النبى او قال الغازي للقوم كبرواحيث يثاب -


অর্থাৎ আলেম ও বক্তা যখন বলেন তোমরা হাবীবে খোদা (ﷺ)-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ কর, অথবা গাজী ও মোজাহেদ বলেন তোমরা তাকবীর পাঠ কর। এটি ছাওয়াবের মাধ্যম। অর্থাৎ এতে ছাওয়াব নিহিত।



❏ মাসয়ালা: (৩১৯)


➠নুজহাতুল ক্বারী শরহে বুখারী পঞ্চম খন্ডের ১১৮ পৃষ্ঠায় হাদীস শরীফ দ্বারা বর্ণিত রয়েছে যে, যখন কোন ব্যক্তি কারো সাথে সাক্ষাত করতে এলে; তাহলে সাধ্যনুসারে তাকে কিছু খাবাও ও পান করাও। আহলে আরবদের প্রবাদ বাক্য :


من زاراحد ولم يأكل عنده شيئًا فكانّما زارميتًا


অর্থাৎ যে কেহ কারো সাক্ষাতে গেলে এবং তাকে সেখানে কিছু খানা পানি খাওয়াইনি, তাহলে বরং সে মৃতের সাথে সাক্ষাতের জন্য গেল।  


➥ [শরহে বুখারী, ফাওয়াদুল ফুয়াদ]



❏ মাসয়ালা: (৩২০)


যখন কোন হুকুম তথা বিধি নিষেধের ক্ষেত্রে বেদআত ও সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে মতানৈক্য ও সন্দিহান হলে সেক্ষেত্রে সুন্নাতকে পরিহার করতে হবে।


ردالمحتار مكروهات الصلوة می‍ں ہے ، اذا تردد الحكم بين سنة وبدعة كان ترك السنة راجحًا على فعل البدعة -


(ফতোয়ায়ে রেজভীয়া ৬ষ্ঠ খন্ড ৫২৮ পৃষ্ঠা)



❏ মাসয়ালা: (৩২১)


আলিমগণ কোরআন মজীদের অনুবাদ তাফসীর বিহীন ও ব্যাখ্যা বিহীন হাদিসের অনুবাদ বর্ণনা করা অপছন্দ করেছেন।  


➥ [নুযহাতুলকারী, খন্ড: ১ পৃ:৪৩৭]


দাওয়াতে আমলী তিন প্রকার:



❏ মাসয়ালা: (৩২২)


১. দাওয়াত পড়া, আমলিয়াত করা দৃঢ়তার সাথে যা দ্বারা জিন্নাতদেরকে কাবু করা হয়।


২. এমন দাওয়াত পড়া ও আমলিয়াত করা যা দ্বারা ফেরেশতাদেরকে কাবুতে আনা হয়। এরকম দাওয়াতের আমলকারী এক প্রকার পাগল, সে সকল প্রাণীর গোস্ত, মাছ, ডিম, দুধ, পেয়াজ, রসুন ইত্যাদি আহার করে না। সে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করে সে যদি কোন কারণে নাপাক হয়ে যায় তখন তাকে হঠাৎ গোসল করতে হয়। তা কিছু ফেরেশতাকে কাবুতে আনার জন্য পড়া হয়। এভাবে জিন ও ফেরেশতাদেরকে কাবু করা প্রকৃত বুযুর্গানে দীনের নিকট তা কূফর, নাপাক ও হারাম।


সকল অলীগণ, শহীদগণ, গাওছ কুতুব ও আবদালের রুহ থেকে ফয়েয ও বরকত হাসিল করা তাদের আত্মার সাথে সাক্ষাত করা তাদের সাথে সফর করা এসকল আত্মাকে নিজের তত্ত্ববধানে আনা এসকল অবস্থা আল্লাহর সত্ত্বায় অধিক মনোনিবেশের মাধ্যমে হয় এবং মুহাম্মদের সত্ত্বায় মানেনিবেশ তা পরিপূর্ণ হয় তা দ্বারা দয়া ও ক্ষমতা অর্জিত হয়।


কবর যিয়ারত ও আত্মা খুলে যাওয়া চশমার মত। সে ব্যক্তি পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত দেশকে নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসে এবং সকল মানুষ তার অনুসারী হয়ে যায়। এ ধরনের লোকের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর সত্ত্বায় নিমজ্জিত হয়ে যায়। তা দ্বারা আলোকিত অন্তর সৃষ্টি হয়। নবী ও অলীদের আত্মার সাথে, শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে অন্তরে অন্তরে মাংসপেশীতে একাত্মতা হয়ে যায়। যখন এ ধরনের আমল শুরু হয়, নবী ও সকল অলীদের আত্মা তার চতুর্দিকে বেষ্ট করে থাকে সে মাঝখানে অবস্থান করে, যে ব্যক্তি এ ধরনের দাওয়াতে আমল করতে চায় তা বৈধ। বেকুফদেরকে তো তা নসীব হবে না। এ দাওয়াতে আমল দ্বারা স্থায়ী দম, পরিপূর্ণ অন্তর ও নি:শেষিত অন্তর অর্জিত হয় এবং কোরআনের ত্রিশ অক্ষরের জ্ঞান দ্বারা হাজার হাজার জ্ঞান অর্জন হয়। প্রত্যেক অক্ষর দ্বারা ক্ষমতার হিকমাত অর্জিত হয়।


➥ [আকলে বেদার:৭৬]



উলে­খ থাকে যে, আলিমগণ কিতাব পড়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেন; কিন্তু সাহেবে দাওয়াত হাদিসের নস অন্তরে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে উত্তর দেন। যা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল দ্বারা অর্জিত হয় তার শরীরের পোশাক আলো হয়, তার অন্তরে স্থায়ী আল্লাহর যিকিরের অবস্থা অর্জিত হয়।


➥ [আকলে বেদার:৩৮]



এ রাস্তায় মানুষের কু-প্রবৃত্তি ও দুনিয়াবী লালসা প্রতিবন্ধক হয়।



❏ মাসয়ালা: (৩২৩)


মানুষের কু-প্রবৃত্তির মূল হল, অন্তর বা কলিজা। যা মানুষের বাম পাশে অবস্থিত। তা নষ্ট হওয়া অর্থ তার কু-প্রবৃত্তি শক্তি বেড়ে যাওয়া এবং পাপে নিমজ্জিত হওয়া; কেননা সেখান থেকেই রক্ত তৈরি হয় তা থেকে পুরো শরীরে সাফলাই হয়, মানুষের শক্তি খানা-পিনা থেকে সৃষ্টি হয় এবং মানুষের কামভাবের সে রক্ত থেকে সৃষ্টি হয়। তাই শরীরে রক্ত থাকলে সেই শক্তি বাড়তে থাকে।  


➥ [হক্কানী, খ, ৭, পৃ:৩০৮, সূরায়ে মুরসালাত]



❏ মাসয়ালা: (৩২৪)


কোন ব্যক্তির ব্যাপারে সাধারণ পরিপূর্ণতা বিশ্বাস রাখা যাবে না; কেননা সকল মানুষের কোনো না কোন অপরিপূর্ণতা থাকে। নিশ্চুপ হওয়া শুধুমাত্র নবীদের বৈশিষ্ট্য। তাই সারকথা হল, নবী ছাড়া সকল মানুষের দোষ থাকতে পারে; তাই কোন পাপ কোন ঘটনাকে পাওয়া বেলায়েতের বিপরীত নয়।


➠হযরত জুনাইদ বাগদাদী (رحمة الله) থেকে জিজ্ঞেস করা হল কোন আল্লাহর অলী কি যিনা করতে পারে? তিনি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইলেন অত:পর তিনি মাথা উঠালেন তখন তিনি বললেন, আল্লাহর সকল কাজে তাকদীরে ফায়সালাকৃত। তাই যদি তার তাকদীরে আযল থেকে লিখা থাকে যে তার থেকে সে পাপ বের হবে তখন তা অবশ্যই হবে তবে সে তাওবার মাধ্যমে পবিত্র হয়ে যায়।  


➥ [মারাজুল বাহরাইন, আব্দুল মুহাদ্দিস দেহলভী, পৃ:১৬০]



❏ মাসয়ালা: (৩২৫)


 তাওবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বস্তু বান্দাহর জন্য। কেননা; বান্দাহর ধ্বংস পাপে নয়; বরং তাওবা ছেড়ে দেওয়ার মধ্যে রয়েছে। তাই হযরত আদম (عليه السلام) ও শয়তানের ঘটনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায়।



❏ মাসয়ালা: (৩২৬)


শেখ ইবনে আতা সেকান্দরী কিতাবুল হিকামে বলেন, কোন আরিফ কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সাথে সম্পর্ক রাখতে পারে? উত্তরে বলেন, কোন সম্পর্ক রাখে না কেননা; আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সাথে সম্পর্ক রাখা বেলায়তের বিপরীত। যদি অন্য দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয় তখন সে ব্যক্তি আরেফ হিসাবে থাকবে না।  


➥ [মারাজূল বাহরাইন, পৃ:১৬১]



❏ মাসয়ালা: (৩২৭)


القاعدة: إن الثابت بالدلالة مثل الثابت بالنص أو أقوى منه


যা দালালত দ্বারা প্রমাণিত তা নসের মত বা তার চেয়েও শক্তিশালী।  ।


➥ [কিতাবুত তাহকীক শরহে হুসামী, পৃ:১২৫]



❏ মাসয়ালা: (৩২৮)


সুন্নাত দু’প্রকার একটি হল, সুন্নাতুল হুদা তা বর্জন করা মাকরূহ। অপরটি যায়েদাহ তা বর্জন কর মাকরূহ হিসাবে গণ্য হবে না। যেমন রাসূলের চরিত্র দাঁড়ানোতে, বসায় ও পোশাক পরিচ্ছেদে।  


➥ [হুসামী, ১০৬]



❏ মাসয়ালা: (৩২৯)


ইহুদীরা ঘুষ নিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে আদেশ দিত। নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ লা’নত করেছেন যারা আদেশ প্রদানে ঘুষের লেনদেন করে।  


➥ [তিরমিযী]



➠ফতওয়ায়ে আলমগিরীতে রয়েছে, ফুকহায়ে কেরাম ঘোষ দেওয়া বৈধ মনে করেছেন ঐ মযলুমের জন্য যে ঘোষ দেওয়া ব্যতীত তার হক উসূল করতে পারছে না।  


➥ [মওয়াহেব, পারা:৬, মায়েদাহ:১১৬]



❏ মাসয়ালা: (৩৩০)


কারো থেকে কোরআন মজীদ নেওয়ার জন্য দাঁড়ানো সুন্নাত।  


➥ [তিরয়াক নাফে, পৃ:১৮]



❏ মাসয়ালা: (৩৩১)


মায়ের উঁচু বংশ নিয়ে কি ছেলেকে উঁচু বংশের বলা হবে?


জবাব: পিতা যদি উচুঁ বংশের না হয় তখন মায়ের দিক দেখে তাকে উচুঁ বংশের বলা হবে না। (ফতওয়া যাইনুদ্দীন ইবনে নুজাইম)


মাজমাউল ফতোওয়াতে তার বিপরীত মত এভাবে এসেছে যে, যদি মায়ের বংশ উঁচু হয় আর পিতার বংশ উঁচু না হয় তখন ছেলেকেও উচুঁ বংশের বলা হবে।  


➥ [জামে সগীর, মাবসুত]



❏ মাসয়ালা: (৩৩২)


নবী (ﷺ) এর দরবারে হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) কতবার তাশরীফ আনলেন?


প্রসিদ্ধ মতে তিনি চব্বিশ হাজার বার উপস্থিত হয়েছেন।  


➥ [ফতওয়ায়ে যাইনুদ্দীন ইবনে নুজাইম মিসরী পৃ:১৮৩]



❏ মাসয়ালা: (৩৩৩)


হযরত আদম (عليه السلام) কে কেন মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন?


আদম (عليه السلام)-এর পূর্বে মাটি ব্যতীত অন্য কোনো বস্তু ছিল না; তাই আদম (عليه السلام) কে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।  


➥ [ফতওয়ায়ে ইবনে নুজাইম]



❏ মাসয়ালা: (৩৩৪)


সূর্য “করসে” চাকতিতে বেশ-কম হয় না, কিন্তু চাঁদ ‘করসে’ বেশকম হয় কেন?


সূর্য প্রতিরাতে আরশের নিচে সিজদার অনুমিত মিলে আর চাঁদকে শুধুমাত্র চৌদ্দ তারিখে সিজদা করার জন্য অনুমতি মিলে। তাই সে জন্য চাঁদ প্রতিরাতে খুশিতে বাড়তে থাকে যাতে সে সিজদার অনুমতি পায় অত:পর সে সরু হতে থাক।  


➥ [ফতওয়ায়ে ইবনে নুজাইম]



❏ মাসয়ালা: (৩৩৫)


সূর্য যখন ডুবে যায় তখন কোথায় অদৃশ্য হয়?


সূর্য একজাতি থেকে অস্ত গেলে অন্য জাতির জন্য তার উদয় হয়।  


➥ [ফতওয়ায়ে ইবনে নুজাইম]



❏ মাসয়ালা: (৩৩৬)


ওয়াযের মাহফিলে সম্বোধনের খেতাবের সাথে কেন দরূদ শরীফ পড়া হয়? অথচ রাসূল (ﷺ) ওয়াযের মাহফিলে হাযির হয় না; তাই গায়েবের সীগাহ (শব্দ) দিয়ে সম্বোধন করা উচিত ছিল? তার জবাব হল তা সত্য; কিন্তু যারা আশেক তাদের নিকট নিকবর্তী ও দূরবর্তী একসমান। ➠বলা হয়:


در راه عشق قرب و بعد نيست،


অর্থাৎ, আশেকদের নিকট নিকবর্তী ও দূরবর্তী একসমান।


➠কবি বলেন,


خيالك فى عينى و ذكرك فى فمى: و مثواك فى قلبى فأين تغيب


অর্থ: আপনার চিত্র আমার চোখে ও আপনার আলোচনা আমার মুখে: আপনার ঠিকানা আমার অন্তরে তাই কোথাই তা বিলুপ্ত হবে।


হযরত ইমাম আব্দুর রউফ ইবনে মুনাবী (رحمة الله) বলতেন, নবী (ﷺ) প্রতি বৈঠক যেখানে তার প্রতি দরূদ পাঠ করা হয় হাযির হন। তাই তোমরা তার প্রতি অধিকহারে দরূদ পাঠ কর এবং বৈঠককে দরূদ শরীফ দ্বারা সৌন্দর্য কর।  


➥ [মুওলাদুল মুনাবী:পৃ:১০]



❏ মাসয়ালা: (৩৩৭)


তাওহীদের মজলিসে অন্য কারো আলোচনা করা তাওহীদে খালেছের বিপরীত।


হ্যাঁ তাওহীদের আলোচনা ও দাবীর সাথে সাথে দলীলও দেওয়া জরুরী। কেননা; সাধরাণ নীতি মোতাবেক দলীল বিহীন দাবী পেশ করা বাতিল। তাই তাওহীদের দলীল হিসাবে কোরআনের দলীল পেশ করতে হয়।



➠মহান আল্লাহ বলেন,  لقدجاءكم برهان من ربكم


অর্থাৎ, তোমাদের নিকট তার পক্ষ থেকে দলীল এসেছে।



এখানে দলীল বলতে মুহাম্মদ (ﷺ)। অন্য দলীলে কোন না কোন সন্দেহ থাকতে পারে তবে এটি এমন একটি দলীল যেখানে কোন ধরণের সন্দেহ থাকতে পারেনা। তাই মুহাম্মদ (ﷺ) তাওহীদের দলীল এবং দলীলের দাবীর জন্য সবসময় প্রয়োজন যেহেতু তাওহীদের মজলিসে দলীল না থাকা দাবী বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই তাওহীদের সাথে দলীলের আলোচনা জরুরী বিষয়। দলীল না থাকলে দাবী গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই অন্যান্য দল তথা ইহুদী ও খ্রিষ্টানের তাওহীদের দলীল না থাকাতে তাদের বিশ্বাস ভ্রান্ত।



❏ মাসয়ালা: (৩৩৮)


দু‘আতে হাত উঠানো কি রকম?


দু‘আতে উভয় হাত বরাবর উঠানো সুন্নাত।  


➥ [আত তিরয়াকুন নাফে:৪৭]



❏ মাসয়ালা: (৩৩৯)


দু‘আর সময় আসমানের দিকে হাত উঠানোর কি হুকুম? দু‘আর সময় আসমানের দিকে হাত উঠানো উচিত নয়।  


➥ [আত তিরয়াকুন নাফে]



দু‘আর শুরুতে হামদ-দরূদ পাঠ ও কেবলামুখী হওয়া সুন্নাত।



❏ মাসয়ালা: (৩৪০)


নাপাক অবস্থায় কোরআন মজীদ স্পর্শ করা এবং কোরআন বিশিষ্ট বক্স উঠানোর কি হুকুম?


নাপাক অবস্থায় কোরআন মজীদ স্পর্শ করা এবং কোরআনের বক্স উঠানো নিষিদ্ধ ও হারাম।  


➥ [আত তিরয়াকুন নাফে:১৮]



❏ মাসয়ালা: (৩৪১)


হায়েয অবস্থায় মহিলাদের সাথে সহবাস করা বৈধ কিনা?


জেনে শুনে হায়েয অবস্থায় মহিলাদের সাথে সহবাস করা হারাম ও কবরী গুনাহ। ইমাম শাফেয়ীর নিকট হালাল বুঝা কূফরী।  


➥ [আত তিরয়াকুন নাফে:২০]



❏ মাসয়ালা: (৩৪২)


সমুদ্রের মাছে কি মহিলাদের মত যৌনিপথ রয়েছে?


হ্যাঁ মহিলাদের মত সমুদ্রের মাছেও যৌনিপথ রয়েছে। অনেক মাঝিরা তাদের সাথে মিলন করে তখনও গোসল ওয়াজিব হবে যদি বীর্যপাত হয়। তবে তা করা হারাম ও গুনাহের কাজ।



❏ মাসয়ালা: (৩৪৩)


মানুষকে বশর কেন বলা হয়?


হ্যাঁ বশর দ্বারা বনী আদম বুঝানো হয়। তার কারণ; তাদের বশর তথা বাহ্যিক চামড়া প্রকাশিত থাকে।  


➥ [জাওহারাতুত তাওহীদ, ১৪১]



❏ মাসয়ালা: (৩৪৪)


একটি হরিনের ঘটনা যেখানে রয়েছে, নবী (ﷺ) হরিণের মায়ের সাথে কথা বলেন, তার দু’জন বাচ্চাকে দুধ পান করানোর কথা রয়েছে তা কতটুকু সত্য।


মুহাদ্দিসীনগণ এহাদিসকে জাল বলেছেন।  


➥ [জাওহারা:১৪০]



❏ মাসয়ালা: (৩৪৫)


জিব্রাইল (عليه السلام) কোন কোন নবীর নিকট কতবার তাশরীফ আনলেন? এবং নবী (ﷺ) তাকে তার নিজ আকৃতিতে কতবার দেখেলেন?


তিনি হযরত আদম (عليه السلام) এর নিকট ১২ বার তাশরীফ এনেছিলেন। হযরত ইদ্রীছ (عليه السلام) এর নিকট আসলেন ৪ বার, হযরত নূহ (عليه السلام) এর নিকট আসলেন ৫৫ বার। হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) এর নিকট আসলেন ৪২ বার। হযরত মূসা (عليه السلام) এর নিকট আসলেন ৪০০বার, হযরত ঈসা (عليه السلام) এর নিকট আসলেন ১০ বার, নবী (ﷺ) এর নিকট আসলেন ২৪০০০ চব্বিশ হাজার বার। তবে দু’বার তিনি তাকে সশরীরে দেখেন একবার নবুয়তের প্রাথমিক সময়ে যখন সূরায়ে মুদ্দাসির অবতীর্ণ হয়। দ্বিতীয়বার মেরাজে গমনের সময়, যখন তিনি সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পাড়ি দিলেন।


তার ছয়শত ডানা রয়েছে। শায়খ দেহলভী তা তদন্তাকারে উলে­খ করেছেন।  


➥ [তাফরীহুল আযকিয়া, খ, ২ পৃ:৩৫]


❏ মাসয়ালা: (৩৪৬)


ইমাম আযম কোন কোন হাদিসকে যাচাই বাচাইয়ের পর নির্বাচন করেছেন?  


হযরত মাখদুম শায়খ আহমদ খামাশখানবী (رحمة الله) জামেউল উসূল কিতাবে লিখেন, ইমাম আযম নিজ ছেলে হাম্মাদকে  নসীহত করে বলেন, হে প্রিয় বৎস! আমি পাঁচ লাখ হাদিস থেকে যাচাই বাচাই করে পাঁচটি হাদিস নির্বাচন করেছি যদি তুমি সেই পাঁচ হাদিস মুখস্থ করে তা মতে আমল কর  উভয় জাহানের কল্যাণ লাভ করবে।



 সে পাঁচ হাদিস হল:



১. إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ


সকল কাজ নিয়তের উপর নির্ভর।



২. لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ.


অর্থ তোমাদের মধ্যে থেকে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের জন্য যা পছন্দ করে তা তার ভাইয়ের জন্য পছন্দ করবে না।



৩. وَالْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ،  


মুসলমান হল, যার হাত পা দ্বারা অপরজন নিরাপদ থাকে।



৪. إِنَّ مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ


মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য হল সে সকল অহেতুক কাজ বর্জন করবে।



 إِنَّ الْحَلاَلَ بَيِّنٌ ، وَالْحَرَامَ بَيِّنٌ ، وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لاَ يَعْلَمُهَا كَثِيرٌ.৫ مِنَ النَّاسِ ، فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ اسْتَبْرَأَ فِيهِ لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ ،


হালাল প্রকাশিত ও হারাম প্রকাশিত মাঝখানে সন্দেহযুক্ত বস্তু রয়েছে যা মানুষ জানে না; তাই যে ব্যক্তি সকল সন্দেহযুক্ত বস্তু থেকে বিরত থাকবে সে নিজের দ্বীন ও সম্মান হেফাযতে রাখবে।  


➥ [নওয়াদেরুল হাদিস, পৃ:৩১]



❏ মাসয়ালা: (৩৪৭)


➠ইমাম আযম (رحمة الله) বলেন, যে কোন বিশুদ্ধ মত আমার মাযহাব। অর্থাৎ, যদি কোন বিশুদ্ধ মাযহাব পাওয়া যায় তা আমার মাযহাব। এর বিপরীতে আমার কথাকে দেওয়ালে মার। তার কি অর্থ?


তার মর্মার্থ হল, যদি কারো আমার কোন কথার ব্যাপারে সন্দেহ আসে এবং এর বিপরীতে কোন বিশুদ্ধ হাদিস তার নিকট থাকে তখন সে হাদিস মতে আমল করবে।  


➥ [তানবীরুল কুলুব:৩১৬]



❏ মাসয়ালা: (৩৪৮)


➠তিরমিযী শরীফে এসেছে,


أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : إِذَا مَرَرْتُمْ بِرِيَاضِ الْجَنَّةِ ، فَارْتَعُوا ، قَالُوا : وَمَا رِيَاضُ الْجَنَّةِ ؟ قَالَ : حِلَقُ الذِّكْرِ.


অর্থ: রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন তোমরা জান্নাতের বাগানের পাশ দিয়ে যাবে তখন তোমরা তা থেকে বিচরন কর তখন বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল জান্নাতের বাগান কি? তখন তিনি বলেন, যিকিরের হালকা।



❏ মাসয়ালা: (৩৪৯)


ওয়াক্ফ কৃত কবরে ঘর বানানো হারাম, নবী, শহীদ, আলিম ও নেককার ব্যতীত।  


➥ [তানবীরুল কুলুব:১৭৯]



❏ মাসয়ালা: (৩৫০)


সূদ খাওয়া মৃত্যুর সময় অশুভ পরিণামের আশংখা রয়েছে।



❏ মাসয়ালা: (৩৫১)


দাঁড়ির আশপাশ কাটা ও চাটার কি হুকুম?



➠মুসনাদে এসেছে, আবু কুহাফা হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর পিতা মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল (ﷺ) এর খিদমাতে এসেছেন তাঁর দাঁড়ি লম্বা হওয়ার কারণে এলোমেলো ছিল। তখন রাসূল (ﷺ) তাঁর দাঁড়ির দিকে ইশারা করে, বলেন, তুমি যদি তা একটু চাটতে।



➠তিরমিযী শরীফের বর্ণনায় এসেছে, নবী (ﷺ) তাঁর দাঁড়ির দৈর্ঘ প্রস্থ কাটতেন।



❏ মাসয়ালা: (৩৫২)


কোন মুসলমানদের মসীবতে খুশি হওয়ার কি বিধান?


হযরত ওয়াসেলা ইবনে আসকা’ থেকে বর্ণিত, আমি রাসূল (ﷺ)কে বলতে শুনেছি তুমি মুসলমান ভাইয়ের মসীবতে খুশি প্রকাশ করো না নতুবা আল্লাহ তায়ালা তাকে সে মসীবত থেকে নিস্কৃতি দিবেন এবং তোমাকে তাতে লিপ্ত করবেন।


এটি বাস্তবে জ্ঞানের কথা। দেখা যায়, নিজ মতের বিপরীত লোকের মসীবতে মানুষ খুশি প্রকাশ করে। আল্লাহ তায়ালা ফলাফল তার বিপরীত করতে কত সময় লাগে।



❏ মাসয়ালা: (৩৫৩)


শেষ যমানায় মানুষের অবস্থা:



➠মুসানাদে হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে তখন লোকেরা অধিকহারে কবরে যাবে সেখানে তারা নিজের পেট রাখবে এবং বলবে আমাদের আশা আমরা যদি এ কবরবাসীর স্থানে হতাম, তার থেকে জিজ্ঞেস করা হল তা কেন? নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন, তা যুগের কঠোরতা, মসীবত ও ফিতনার কারণে।



➠ইবনে মাজাহতে হযরত আবূ হুরাইরা (رضي الله عنه) সুত্রে বর্ণিত আছে যে, নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহর কসম যার হাতে আমার জান রয়েছে  দুনিয়া ঐ সময় পর্যন্ত শেষ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত একজন লোক কবরের পাশ দিয়ে যাবে তার উপর পড়বে এবং বলবে আমি যদি এ কবর বাসীর স্থানে হতাম। তখন ধর্ম পুরোপুরি পরীক্ষায় ভরে যাবে। এ যুগ থেকে আল্লাহর পানাহ। কেননা; সে সময় মানুষ নিজের মুখ দিয়ে নিজের মৃত্যু তালাশ করবে এবং নিজের মৃত্যুকে নিজের জীবনের উপর প্রাধান্য দিবে। তখন মানুষের সকল বাসনা দুনিয়ার সাথে হবে। তখন তারা মৃত্যুতে তাদের শান্তি দেখবে।



❏ মাসয়ালা: (৩৫৪)


কোরআনের আয়াত ও হাদিস মর্মার্থের দিক দিয়ে চার প্রকার:


১. ইশারাতুন নস


২. দালালাতুন নস।


৩. ইবারাতুন নস।


৪. ইকতিজাউন নস।



তেমনি যে কোন শব্দ অর্থের দিক দিয়ে চার প্রকার:


১. আভিধানিক।


২. শরয়ী


৩. ওরফে আম


৪. ওরফে খাস।


যেহেতু কোরআনের আয়াত ও হাদিসে উলি­খিত যে কোন একটির আলোকে অর্থ প্রকাশ করে; তাই বুঝার বিষয় এ চার প্রকারের বাইরে কোন অর্থ গ্রহণযোগ্য নয়।


একই কথা শব্দের ব্যাপারে। যে অর্থ উলি­খিত অর্থ থেকে কোন একটির সাথে সম্পর্ক রাখবে না তা গ্রহণযোগ্য নয়।


জেনে রাখা উচিত যে, কোরআনের শব্দের অর্থ ও মর্ম বুঝা অনেক দুরূহ। বানোয়াট অর্থ বর্ণনা নিষেধ।



❏ মাসয়ালা: (৩৫৫)


মানুষের সাথে জীবন যাপন।


ইমাম আযম আবু হানিফা (رحمة الله) নিজ ছাত্র ইমাম আবু ইউছুফ ইবনে কারেদ সিতী বসরীর নিকট অসীয়ত নামা লিখে পাঠান যেখানে লেখা ছিল, এ কারণকে তুমি ভাল করে বুঝ। যখন তুমি মানুষের সাথে জীবনযাপনকে খারাপ বুঝবে তখন তারা তোমাকে দুশমন বুঝবে সে তোমার মাতাপিতা হোকনা কেন এবং যখন তুমি সমাজের সাথে ভাল আচরণ করবে তখন সেই সমাজ তোমাকে ভাল বাসবে এবং তার সকল সদস্য তোমার জন্য মাতাপিতার মত হবে।  


➥ [অসীয়ত নামা ইমাম আযম, ২]



❏ মাসয়ালা: (৩৫৬)


নিয়তের ভিন্নতার কারণে বিধানে তারতম্য:


যেমন যখন কোন খতীব হাঁচি দিল অত:পর সে আলহামদুলিল্লাহ বলল, যদি তা দ্বারা সে খুতবা উদ্দেশ্য নিল তখন তা সহীহ হবে, আর যদি সে হাঁচির দু‘আ নিল তখন তা বিশুদ্ধ হবে না। তেমনি কেউ যবেহের সময় হাঁচি দিল তখন হাচির দু‘আ হিসাবে আলহামদুলিল্লাহ পড়ল তখন বিশুদ্ধ হবে না। পার্থক্য হল, যবেহের সময় তাসমিয়া পড়া ওয়াজিব।  


➥ [আল আশবাহ ওয়ান নযায়ের, খ, ১ পৃ:১৯০]



❏ মাসয়ালা: (৩৫৭)


সকল বস্তুর মূল হল মুবাহ।  


➥ [ফতওয়ায়ে কাযীখান, খ, ৪ পৃ:৩৬৩]



❏ মাসয়ালা: (৩৫৮)


যে ব্যক্তি সওয়াবের নিয়তে মাতাপিতা বা কারো কবর যিয়ারত করে তখন যিয়ারতকারী ও জাহান্নামের মাঝখানে পর্দা হবে এবং সাধারণ লোকের কবর যিয়ারত করা অন্তরের কঠোরতা দূর করেন।


হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি নিজ মাতাপিতার কবর যিয়ারত করবে বা মাতা বা শুধু পিতার কবর সওয়াবের আশায় যিয়ারত করবে তার জন্য জ্ঞান আমার থেকে পর্দা হবে।  


➥ [দসতুরুল কাযা, ১৫২]



বর্ণিত আছে যে, একজন ব্যক্তি নবী (ﷺ) এর দরবারে অন্তরের কঠোরতার অভিযোগ করলেন তখন নবী (ﷺ) বললেন, কবরের দিকে তাকাও।  


➥ [দসতুরুল কুযাত, ১৫২]



❏ মাসয়ালা: (৩৫৯)


কোরআন মজীদ উত্তম না নবী (ﷺ) উত্তম? তাতে মত্যনৈক্য রয়েছে, ফতওয়ায়ে শামীতে এসেছে সেখানে মতানৈক্য রয়েছে তবে নিশ্চুপ থাকা ভাল।




❏ মাসয়ালা: (৩৬০)


عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ليس للمؤمن أن يذل نفسه ، قيل: يا رسول الله! وكيف يذل نفسه قال: يتعرض من البلاء ما لا يطيق .


অর্থ: হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ  করেন, কোন মু’মিনের উচিত নয় নিজকে বে-ইজ্জত করা তখন তাকে বল হল কিভাবে সে নিজকে বে ইজ্জত করবে তিনি বলেন সে  নিজেকে এমন মসীবতের সামনে পেশ করবে, যা সে বরদাশত করতে পারবে না।  


➥ [মুসনাদে ইমাম আযম, পৃ:৩৬৪]



❏ মাসয়ালা: (৩৬১)


মানুষ যদি না বুঝার কারণে নিজকে কঠিন ইবাদতে লিপ্ত করে দেয় তখন সে অধিকাংশ সে রোগে আক্রান্ত হয়ে যায় যার কারণে অনেক সময় ধ্বংস হয়ে যায় এবং ইবাদত বন্দেগীও ছেড়ে দেয় তাই শরীয়তে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরকম আমল শারীরিক ক্ষতি বহন করে।



❏ মাসয়ালা: (৩৬২)


عن جابر بن عبد الله قال جاء رجل من الأنصار إلى النبى صلّى الله عليه وسلّم فقال يا رسول الله ما رزقت ولدا قط و لا ولد لى قال النبى  صلّى الله عليه وسلّم فأين أنت من كثرة الاستغفار و كثرة الصدقة .


অর্থ: হযরত জাবের  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, এক আনসারী ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) এর দরবারে হাযির হলেন এবং বললেন হে আল্লাহর রাসূল আমার কখনো কোন সন্তান নসীব হয়নি। নবী (ﷺ) বলেন তুমি অধিকহারে ইসতিগফার কর এবং অধিকহারে সদকা কর এর বরকতে তুমি সন্তানের মালিক হবে, তখন সে অধিকহারে সদকা করা আরম্ভ করেছে এবং অধিকহারে ইসতিগফার করছে। হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন তখন তার নয়টি সন্তান জন্মগ্রহণ করল।


বাস্তবে এ বিধানটি নিম্নোক্ত আয়াত থেকে নির্গত। নূহ (عليه السلام) এর আলোচনা চলছে তিনি নিজ উম্মতকে



فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا(১০) يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا(১১) وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ.



অর্থ: তোমরা রবের কাছে ক্ষমা তালাশ কর কেননা তিনি ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদেরকে ক্ষমাশীল ও আসমান থেকে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষন করবেন  এবং তোমাদেরকে মাল ও সন্তান দিয়ে সাহায্য করবেন।  


➥ [নূহ:১০-১১, মুসনাদ:৩৬৫]



❏ মাসয়ালা: (৩৬৩)


জেনে রাখা উচিত হাতে চুমু খাওয়া পায়ে চুমু খাওয়া মুস্তাহাব। কখনো তা বিদা‘আত ও হারাম নয়। বরং তা সুন্নাত প্রত্যেক অবস্থায় তা সুন্নাত। তা অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম, মুহাদ্দিসীন, মুফাসসিরিন, ওলামায়ে মুহাক্কিকীন ও আকাবের সূফিয়ায়ে কেরাম থেকে তা প্রমাণিত। তাতে কিছু গাইরে মুকালি­দ আলিম ছাড়া কারো মতানৈক্য নেই। তাদের হাত পা চুমু খাওয়া তাদের সম্মানের জন্য। তা সিজদা নয় বরং তা দ্বারা তার ফয়েয বরকত হাসিল করা। তাকে সিজদা আখ্যায়িত করা প্রতারণা। আল্লাহ ওয়ালা থেকে ফয়েয হাসিল করা ঈমানী নূর অর্জন। মহান আল্লাহ কোরআন, হাদিস শরীফের, আউলিয়ায়ে কেরাম, ও আলিমদের ফয়েয নবীর অসীলায় আমাদের দান করুন!



❏ মাসয়ালা: (৩৬৪)


কোন পুরুষ ওযর ব্যতীত নিজের চেহারা ঢাকা মাকরূহ।



❏ মাসয়ালা: (৩৬৫)


মদে লবণ ঢালাতে সিরকা তৈরী হয় মৃতের চামড়া দাবাগত দ্বারা পবিত্র হয়ে যায়।  


➥ [হিয়ারাতুল ফিকাহ]



❏ মাসয়ালা: (৩৬৬)


যে ব্যক্তি দু‘আয়ে কুনুত পড়তে জানে না; তার বিবাহ সহীহ না।  


➥ [হুজ্জাতুল ইসলাম]



❏ মাসয়ালা: (৩৬৭):


কোরআন মজীদ ও হাদিসের বাহ্যিক অর্থ ছেড়ে শুধু ভেতরের অর্থ নেয়া কূফরী।



❏ মাসয়ালা: (৩৬৮):


কোরআনের আয়াত ও সহীহ হাদিস ছেড়ে হালকা, গুরুত্বহীন রায় নেওয়া কূফরী।



❏ মাসয়ালা: (৩৬৯)


পাপকে হালাল বুঝা ও ভাল বুঝা কূফরী।



❏ মাসয়ালা: (৩৭০)


সত্য শরীয়তের উপর অপবাদ দেওয়া কূফরী।



❏ মাসয়ালা: (৩৭১)


আল্লাহর ভয় ছেড়ে দেওয়া কূফরী।



❏ মাসয়ালা: (৩৭২)


আল্লাহ থেকে নৈরাশ হওয়া কূফরী।



❏ মাসয়ালা: (৩৭৩)


নবীর শানে ত্রুটি তালাশ করা বা বর্ণনা করা কূফরী।


সমাপ্ত

_________________

কিতাবঃ মুনীয়াতুল মুছ্লেমীন

[মাসয়ালা-মাসায়েল] [ প্রথম খন্ড ]

রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী

সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন